পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দসংবলিত গ্রাফিতির ছবি পুনঃস্থাপন ও ছাত্র-জনতার ওপর হামলার বিচারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে সমাবেশ হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে
পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দসংবলিত গ্রাফিতির ছবি পুনঃস্থাপন ও ছাত্র-জনতার ওপর হামলার বিচারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে সমাবেশ হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে

ঢাকায় ‘আদিবাদী ছাত্র-জনতার’ ওপর হামলার বিচারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

পাঠ্যবইয়ে আদিবাসী শব্দসংবলিত গ্রাফিতির ছবি পুনঃস্থাপন, ঢাকায় আদিবাসী শিক্ষার্থী ও ছাত্র-জনতার ওপর হামলার বিচারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা’Ñব্যানারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

কর্মসূচির শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডসহ বিভিন্ন একাডেমিক ভবনসংলগ্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে বিক্ষোভটি শেষ হয়। পরে সেখানে ঘণ্টাব্যাপী সমাবেশ হয়।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ রাজা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার ও ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. গোলাম সারওয়ার। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল, ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাকিব হোসেনসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী ও আদিবাসী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আলিফ শাহরিয়ার।

অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা বলেন, ‘আদিবাসীদের সঙ্গে উপজাতি, সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ যেসব কথা উঠে আসে, প্রতিটি শব্দই রাজনৈতিক। এই রাজনৈতিক শব্দগুলোর সঙ্গে অর্থনীতি যুক্ত থাকে। ফলে আদিবাসী হিসেবে কাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে কাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে, সেটি কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এই ভূখণ্ডে বুদ্ধের শাসন থেকে শুরু হয়ে হিন্দু শাসন, সেনের শাসন, পরে মুসলিমের শাসনের ধারাবাহিকতা আছে। এটাকে অস্বীকার করে যদি আপনি বাঙালি চিন্তা করেন, তাহলে আপনি বাঙালি নন। আদিবাসী চিন্তা করতে গেলে তাদের অধিকারের কথা আসে। এই অধিকারের কথাটা আমরা অস্বীকার করতে চাই।’

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে, সেটাকে নস্যাৎ করার জন্য কিছু মানুষ উঠেপড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেন ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. গোলাম সারওয়ার। তিনি বলেন, ‘আদিবাসী ভাই-বোনেরা যখন তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছিল, তখন স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির সদস্যরা লাঠিতে জাতীয় পতাকা বেঁধে তাদের ওপর আক্রমণ করেছিল। সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে তাদের আহত ও রক্তাক্ত করা হয়েছে। এভাবে জাতীয় পতাকারও অবমাননা করা হয়েছে। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে আদিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে সবার বাংলাদেশ নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।’

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামের সংগঠনটি কেবলই উগ্রপন্থী সংগঠন নয় বলে মনে করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি বিজয় চাকমা। এর পেছনে অন্য পটভূমি আছে বলে মনে করেন তিনি। বিজয় বলেন, ‘এটি পাহাড়ের আশি-নব্বই দশকের স্যাটেলার কর্তৃক মদদপুষ্ট একটি সংগঠন। ফলে যখনই আদিবাসী জনগোষ্ঠী আত্মনিয়ন্ত্রণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিদাওয়া তোলে, তখনই তাদের মধ্যে বিষফোড়া উন্মোচিত হয়। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমতলের আদিবাসীদের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা প্রদেশ ও বিদ্রোহ করার অভিযোগ তোলে। এ ধরনের চিন্তাভাবনা যারা পোষণ করে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করে। ঢাকায় যে হামলা হয়েছে, সেটির দায় এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। রাষ্ট্রের চরিত্র ফ্যাসিস্ট সরকারের মতোই আছে। যার ফলে পুলিশ বাহিনী প্রতিবাদী সমাবেশে হামলা চালিয়েছে।’