
ঝরনাটির অবস্থান রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট এলাকায়। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে দেখা মিলবে এ জায়গার। বাঘাইহাট-সাজেক সড়কের মূল রাস্তা থেকে প্রায় ১৫ মিনিট ঝিরপথ ধরে হাঁটলে ঝরনাটির পাদদেশে যাওয়া যায়।
ভোরের কুয়াশা ইতিমধ্যে শীতের আগমনীর জানান দেওয়া শুরু করেছে। আর এক মাস পরই শুরু হচ্ছে পুরোদমে শীত। এর আগেই যাঁরা ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাঁরা যেতে পারেন খাগড়াছড়ির হাজাছড়া ঝরনায়। আঁকাবাঁকা ঝিরিপথ, পানির কলকল শব্দের সঙ্গে পাখির কিচিরমিচির—সবকিছুই মিলবে এখানে।
ঝরনাটির অবস্থান রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট এলাকায়। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে যেতে দেখা মিলবে এ জায়গার। বাঘাইহাট-সাজেক সড়কের মূল রাস্তা থেকে প্রায় ১৫ মিনিট ঝিরপথ ধরে হাঁটলে ঝরনাটির পাদদেশে যাওয়া যায়। দুই পাশে ঘন জঙ্গল আর নাম না–জানা অসংখ্য গাছের সবুজ পথও এ ঝরনার অন্যতম আকর্ষণ।
হাজাছড়া ঝরনার নামকরণ করা হয়েছে এর উৎপত্তিস্থলের নাম অনুসারে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ একে শুকনাছড়া ঝরনা বা ১০ নম্বর ঝরনা নামেও চেনেন। পুরোদমে শীত শুরু হলে ঝরনার সৌন্দর্যে কিছুটা ভাটা পড়ে। কারণ, এতে পানি কিছুটা কমে যায়। তবে সহজ পথ আর চারপাশের গাছপালার জন্য এটি এখন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে হাজাছড়া ঝরনায় যান এ প্রতিবেদক। মূল সড়ক থেকে নিচে নামতেই দেখা মেলে সরু পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ আর দুই পাশে বুনো গাছপালার। অন্য পাহাড়ি রাস্তার তুলনায় এ রাস্তায় হাঁটাও সহজ। প্রায় ১০মিনিট হাঁটার পর কানে আসে পানির টুপটাপ শব্দ। এরপর দেখা মেলে ছড়ার পথ। ঠান্ডা পানি আর পাথরের এ ছড়া ধরে ৫ মিনিট এগুলোই কাঙ্ক্ষিত এ ঝরনা।
ঝরনাকে ঘিরে মূল সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে কয়েকটি অস্থায়ী দোকান। ওই এলাকার কমলিনী চাকমা নামের এক ফল বিক্রেতা প্রথম আলোকে বলেন, আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা এখানে বেশি আসেন। তবে অনেক সময় সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি ফেরার পথে অনেক পর্যটক গাড়ি দাঁড় করিয়ে ঝরনা দেখতে যান। বিশেষ করে ছুটির দিনে ভিড় বাড়ে।
নয়নাভিরাম হওয়ায় প্রতিদিনই এখানে ভিড় করেছেন শত শত পর্যটক। তাঁদের একজন মো. রাসেল। তিনি ঢাকা থেকে সাজেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে এ ঝরনায় এসেছেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাজেক থেকে ফেরার সময় গাড়ির সহাকারীর কাছে তাঁরা ঝরনার কথা জানতে পারেন। সড়কের পাশে হওয়ায় ঝরনাটা দেখতে এসেছেন। সাজেক ঘুরতে এসে ঝরনা দেখতে পাওয়া, ঝরনার পানিতে গোসল করা, এটা তাঁদের বাড়তি পাওনা।
ভ্রমণে গেলে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। বৃষ্টি হলে ঝিরিপথ কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে, তখন গ্রিপযুক্ত ট্র্যাকিং জুতা পড়া ভালো। আর যাত্রার সময় পর্যাপ্ত শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে নেওয়া উচিত, কারণ ঝরনার আশপাশে খাবার বা থাকার ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া অনেক সময় দেখা যায় পর্যটকেরা প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট বা পলিথিন ঝরনার পাশে ফেলে যান। এ বিষয়টি পরিহার করতে হবে।
‘সড়কের পাশে হওয়ায় ঝরনাটি দেখতে এসেছি। সাজেক ঘুরতে এসে ঝরনা দেখতে পাওয়া, ঝরনার পানিতে গোসল করা, এটা বাড়তি পাওনা।’ —পর্যটক মো. রাসেল
হাজাছড়া ঝরনায় যেতে হলে প্রথমে খাগড়াছড়িতে যেতে হবে। ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, কলাবাগান থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ির বাস রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে আসতে হলে নগরের অক্সিজেন অথবা কদমতলী বিআরটিসি বাস টার্মিনালে যেতে হবে। সেখান থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ির বাস পাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি নেমে বাস, মোটরসাইকেল, চাঁদের গাড়ি (জিপ) অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় প্রথমে দীঘিনালা উপজেলায় যেতে হবে। ঢাকা থেকে শান্তি পরিবহনের বাসে সরাসরি দীঘিনালায় আসার সুযোগ রয়েছে। দীঘিনালা বাস টার্মিনাল থেকে মোটরসাইকেল বা চাঁদের গাড়িতে করে বাঘাইহাটে আসা যায়।