কক্সবাজার শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে হিমছড়িতে শামুক-ঝিনুক, মুক্তা, পাথর দিয়ে তৈরি রকমারি পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এখানকার ঝিনুক ও কৃত্রিম মুক্তার গয়না বেশ সস্তা। সম্প্রতি তোলা
কক্সবাজার শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে হিমছড়িতে শামুক-ঝিনুক, মুক্তা, পাথর দিয়ে তৈরি রকমারি পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এখানকার ঝিনুক ও কৃত্রিম মুক্তার গয়না বেশ সস্তা। সম্প্রতি তোলা

কক্সবাজারে যেখানে সস্তায় মিলবে শামুক–ঝিনুক ও মুক্তার মালা

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কেনাকাটার তালিকার থাকে শামুক-ঝিনুকের তৈরি রকমারি অলংকার। শহর এবং সৈকত এলাকায় এসব পণ্য বেচাবিক্রির দোকান আছে দুই শতাধিক। কিন্তু মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে দূরের হিমছড়ি পাহাড়ি ঝরনা যাঁরা দেখতে যান, তাঁরা ইচ্ছা করলে সেখান থেকে কম দামে কিনে নিতে পারেন পছন্দের পণ্যসামগ্রী।

হিমছড়ি এলাকায় একটি দোকানে শামুক-ঝিনুক, কৃত্রিম মুক্তা ও পাথর দিয়ে তৈরি বিভিন্ন রকমের পণ্য বিক্রি হয়। দোকানের নাম ‘আনসার স্টোর’। দোকানের বিক্রেতা কিশোর মো. আতিক উল্লাহ (১৭। তার দোকানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে নানা রকম অলংকার। এর মধ্যে শামুক মালা ৩০ টাকা, পাথরের মালা ৫০ টাকা, কৃত্রিম মুক্তার মালা ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েক প্রকারের হাতের বালার মধ্যে শামুকের বালা ২০ টাকা, পাথর ও মুক্তার বালা ৫০ টাকা করে। তিন প্রকারের চুল বাঁধার সামগ্রী রয়েছে। এর মধ্যে শামুক কাঠি ৬০ টাকা, শামুকের কাঁকড়া ৭০ টাকা। শামুকের কানের দুল ২০ টাকা, মুক্তার চুড়ি ১০০ টাকা, শামুক-ঝিনুকের হাতব্যাগ ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে কয়েক জন তরুণ-তরুণীকে কেনাকাটা করতে দেখা যায়।

জানতে চাইলে সিলেটের নাসরিন আকতার (২৩) বলেন, মাত্র ১৫০ টাকায় একটা মুক্তার মালা, ৩০ টাকায় ঝিনুকের বালা পাওয়া যাচ্ছে। আত্মীয়স্বজনেরা এসব উপহার পেলে বেজায় খুশি হবেন। আরেক তরুণী বড় দুটি শামুক কিনে তাতে লিখিয়ে নেন ‘ভালো থেকো, মনে রেখো’। ২৫ টাকা দামের শামুকে নাম লেখাতে তাঁর খরচ হয়েছে ১৫ টাকা।

বিক্রেতা আতিক উল্লাহ জানায়, গ্রামের লোকজন সমুদ্রসৈকত থেকে শামুক-ঝিনুক কুড়িয়ে আনেন। রোদে শুকিয়ে মালা তৈরির উপযোগী করে তাদের কাছে বিক্রি করেন। মালা তৈরির কৃত্রিম মুক্তা ও পাথর কিনে আনতে হয় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার শহর থেকে। আসল মুক্তা ও পাথর পাওয়া যায় না, গেলেও দাম অনেক বেশি। তার দোকানে প্রতিদিন ২০-২৫ হাজার টাকার পণ্য বেচাবিক্রি হয়। বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিক্রি বেড়ে যায়। মাসে তার লাভ থাকে ১ লাখ টাকার মতো। এই টাকায় ভাইবোনের লেখাপড়া ও সংসার খরচ চলে।

আতিক উল্লাহর বাড়ি হিমছড়ি এলাকাতে। বাবার আনসার উল্লাহর নামের দোকানের নাম রাখা হয়েছে বলে জানায় সে। দুই বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় আতিক উল্লাহ স্থানীয় ওয়ামী একাডেমিতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। আশপাশে উচ্চবিদ্যালয় না থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আর পড়াশোনা হয়নি তার। তিন বছর ধরে একাই দোকান পরিচালনা করছে আতিক। ছোট ভাইবোনদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার প্রতিজ্ঞা রয়েছে তার।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণি পয়েন্টের ছাতা মার্কেটে শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি রকমারি পণ্য বিক্রির দোকান আছে ১৫৭টি। সুগন্ধা সৈকতে আছে আরও ৫০-৬০টি দোকান। এসব দোকানে প্রতিদিন ১০-১৫ লাখ টাকার রকমারি অলংকার বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে সৈকত ঝিনুক শিল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, আগে সমুদ্রসৈকতে জোয়ারের সময় বিপুল পরিমাণ মরা শামুক-ঝিনুক ভেসে আসত। এখন কমে গেছে। পর্যটকের চাহিদা পূরণ করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে শামুক-ঝিনুকের পণ্য সংগ্রহ করতে হয়। আর কৃত্রিম মুক্তা ও পাথর আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে।