
নোয়াখালীতে অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় ২৪০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মৎস্য খাতে, এই খাতে ১৩৫ কোটি ৯ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখনো পানিবন্দী রয়েছেন জেলার ছয় উপজেলার ১৭ হাজার ৪৬০ পরিবার। বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় নোয়াখালীর ৬টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে পানিবন্দী হন ২ লাখ ৩ হাজার মানুষ।
জানতে চাইলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কার্যালয়ের প্রধান মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে ক্ষয়ক্ষতির এই তথ্য নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ছয় উপজেলার ৪৫ হাজার ৭০৩ জন পানিবন্দী রয়েছেন।’
কোন খাতে কত ক্ষতি
অতিবৃষ্টিতে জেলার ৯ উপজেলাতেই খেতের ফসল, আমন বীজতলা, পুকুর ও খামারের মাছ, পোলট্রি খামার, হাঁস-মুরগি, রাস্তা ও বেড়িবাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এসব উপজেলার ৫ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমির। অন্যদিকে আমন ধানের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে ৮৯১ হেক্টর জমির। সব মিলিয়ে এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫১ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
ফসলের জমি নষ্ট হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষকেরা। জানতে চাইলে সুবর্ণচর উপজেলার চর জব্বর এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে জানান, তাঁর প্রায় ৪০ কেজি ধানের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। ওই বীজতলা দিয়ে চার একর জমি চাষ করতে পারতেন। এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
পুকুর ও খামার ভেসে যাওয়ায় বড় মাছের ক্ষতি হয়েছে ১১২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আর পোনা মাছের ক্ষতি হয়েছে ২২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। কবিরহাট, সেনবাগ ও সুবর্ণচর উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে ৫৮টি বসতঘরের। এসব বসতঘরের আর্থিক মূল্য ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
প্রাণিসম্পদ খাতে হাঁস ও মুরগি মারা গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৫৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। জলাবদ্ধতায় জেলার ৬০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও হাতিয়া উপজেলায় বাঁধ ও নদীর তীরেরও ক্ষতি হয়েছে। এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ ২৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এবারের জলাবদ্ধতায় ক্ষতির পরিমাণ ২৪০ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার ১০০ টাকা।
পানিবন্দী মানুষ
এখনো জেলার কবিরহাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগ, সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলার নিচু এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে জলাবদ্ধতা রয়েছে। তবে কবিরহাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশি। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন টানা জলাবদ্ধতায় তাঁরা ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। জানতে চাইলে সদর উপজেলার কাদিরহানিফ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ওয়ার্ডের প্রায় ৫৫ শতাংশ বাড়িতে এখনো পানি। পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী খাল দিয়ে পানি নামার গতি অত্যন্ত ধীর হওয়ার কারণে দুর্ভোগ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় জুলাই মাসে স্বাভাবিকভাবে ৬৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু মাসের প্রথম ১০ দিনেই ৬২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ কারণে জলাবদ্ধতাও দেখা দিয়েছে।