Thank you for trying Sticky AMP!!

নোয়াখালীতে ভোটের রাতে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের রায় ঘোষণার পর প্রধান অভিযুক্ত সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আদালত থেকে কোর্ট হাজতে নেওয়া হচ্ছে। আজ সোমবার বেলা একটার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে

‘তারা শুধু ভিকটিমেরই ক্ষতি করেনি, তারা রাষ্ট্রেরও ক্ষতি করেছে’

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ‘মামলার আসামি, এজাহারকারী ও ভিকটিম পূর্বপরিচিত। তাঁরা নারীকে ধর্ষণসহ মারধর করে অত্যন্ত অমানবিক ও জঘন্য অপরাধ করেছেন। তাঁরা শুধু ভিকটিমেরই ক্ষতি করেনি, তাঁরা রাষ্ট্রেরও ক্ষতি করেছেন। তাই আসামিরা বিচারকের কোনো ক্ষমা বা করুণা পেতে পারেন না।’

আজ সোমবার দুপুরে রায় ঘোষণা করেন নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদাউস। রায়ে ১০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বেলা ১১টায় এজলাসে বসেই রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টায় ৪৬ পৃষ্ঠার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপিত ২৩ জন সাক্ষীর বক্তব্য, ৮ জন আসামির আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, আসামি পক্ষের পাঁচজন সাক্ষীর বক্তব্য পড়ে শোনানোর পাশাপাশি ইতিপূর্বের বিভিন্ন মামলার রেফারেন্স উপস্থাপন করেন বিচারক।

Also Read: নোয়াখালীতে ভোটের রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণ: ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৬ জনের যাবজ্জীবন

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধের প্রবণতা বেড়ে গেলে এবং বিচারে আসামিরা খালাস পেলে বিচারক ও বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়। তাই আসামিরা বিচারকের কোনো ক্ষমা বা করুণা পেতে পারেন না। বরং তাঁরা তাঁদের প্রকৃত অপরাধের সাজা পেলেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ কিংবা এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতা করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকবেন।’

রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে আসামিপক্ষ

আলোচিত এ মামলাটির রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে জানানো প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী হারুনুর রশিদ হাওলাদার বলেন, মামলার বিচারকালে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক উপস্থাপিত ২৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮ জন ছিলেন সরকারি সাক্ষী। বাকি ১৫ জনের মধ্যে ছয়জন ছিলেন বাদীর পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়। আর নয়জন সাক্ষী ছিলেন নিরপেক্ষ, যাঁদের সবাইকে আদালত বৈরী ঘোষণা করেছে। এতে মামলাটি নিরপেক্ষ সাক্ষী দ্বারা সমর্থিত হয়নি। তাই রায়ের কপি পাওয়া সাপেক্ষে আসামিদের পক্ষে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

Also Read: সুবর্ণচরে এত ধর্ষণ কেন?

রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য

রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি ছালে আহমদ সোহেল খান বলেন, দেশ-বিদেশে আলোচিত ছিল সুবর্ণচরের ওই দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাটি। রায় উপলক্ষে সকলের চোখ ছিল আজ এই আদালতের দিকে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। প্রত্যেক সাক্ষী ঘটনার বিষয়ে যথাযথ সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন আদালতে। যার প্রতিফলন ঘটেছে আদালতের আজকের রায়ে। আদালত ১০ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের যে রায় দিয়েছেন, তাতে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট। আলোচিত ঘটনার বিচারকাজে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তিনি তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

রায় দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি

রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্যাতনের শিকার সেই নারী। তিনি রায় ঘোষণার পুরোটা সময় ধরে আদালত কক্ষের ভেতরে একটি চেয়ারে কিছুক্ষণ পরপরই নীরবে চোখের পানি ফেলছিলেন। পরে রায় শোনার পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের সেই দিনের নির্যাতনের কথা তিনি এখনো ভুলতে পারছেন না। আদালত যে রায় দিয়েছেন, তিনি তাতে সন্তুষ্ট। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে রায় বাস্তবায়নের দাবি জানান।

নারী অধিকার নেত্রীর প্রতিক্রিয়া

রায় ঘোষণাকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী নারী অধিকার জোটের সভাপতি লায়লা পারভীনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা। রায় ঘোষণার পর নারী নেত্রী লায়লা পারভীন বলেন, সুবর্ণচরে চার সন্তানের এই মায়ের ওপর সেদিন যে নির্যাতন নেমে এসেছিল, সেটি ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। তাই ঘটনাটি শোনার পর থেকেই নারী অধিকার জোট ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার ছিল। আজ আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে সমাজে একটি বার্তা যাবে, অপরাধী যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন, অপরাধ করলে তাকে সাজা পেতে হবে। নারী অধিকার জোট আশা করে, উচ্চ আদালতেও এই রায় বহাল থাকবে।

আসামিদের স্বজনদের বিক্ষোভ

রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনেরা। তাঁরা ‘এ রায় মানি না, মানব না বলে’ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এর আগে আদালতে বিচারক রায় ঘোষণা পর কাঠগড়ায় থাকা আসামিদের বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়, ‘জজ সাহেব, এটা কী রায় দিলেন? এই রায়ের মাধ্যমে আমাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে, জুলুম করা হয়েছ। ঘটনাটি মিথ্যা ছিল।’