কাঁটাতারের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত থেকে তোলা
কাঁটাতারের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত থেকে তোলা

মিয়ানমার পরিস্থিতি

উখিয়া সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি, রোহিঙ্গা যুবক গুলিবিদ্ধ

কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতবিল সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে টানা চার ঘণ্টা থেমে থেমে গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন বাংলাদেশ সীমান্তের মানুষ। মো. ইয়াস নামের এক রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এর আগে ৪ অক্টোবর মধ্যরাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের চাকমাপাড়া সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছিল।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে এ গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাখাইন রাজ্যের অভ্যন্তরে রাতের গোলাগুলির ঘটনায় তাঁর ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা পালংখালী, রহমতের বিল, ধামনখালী, থাইংখালী, বালুখালী এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু পশ্চিম পাড়ার কয়েক হাজার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। গুলিতে মিয়ানমারের একজন রোহিঙ্গা যুবক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার রয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য প্রথম আলোকে জানান, গুলিতে আহত রোহিঙ্গা যুবকের নাম মো. ইয়াস। তিনি উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১২) বাসিন্দা। ধারণা করা হচ্ছে, রাখাইন রাজ্যে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।

রাখাইন রাজ্যে রাতভর থেমে থেমে গোলাগুলির সত্যতা নিশ্চিত করেন উখিয়া ৬৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা সতর্ক অবস্থানে থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। নাফ নদী ও স্থলসীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।’

গুলিতে রোহিঙ্গা যুবক আহত হওয়া কোনো তথ্য বিজিবির কাছে নেই জানিয়ে বিজিবি অধিনায়ক বলেন, বাংলাদেশের এপারে ওপার থেকে কোনো গুলি ছুটে আসেনি। গোলাগুলি হচ্ছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে।

উখিয়ার থাইংখালী সীমান্তের স্কুলশিক্ষক মো. কমরুদ্দিন বলেন, গভীর রাতে থেমে থেমে গোলাগুলির ঘটনায় এপারের গ্রামের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গুলি ছুটে আসার ভয়ে অনেকে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। আট-নয় মাস আগেও ওপারের মর্টার শেলের বিকট শব্দে এপারের মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, পালংখালীর বিপরীতে নাফ নদীর ওপারে রাখাইন রাজ্যের ঢেকুবনিয়া এলাকা। ১১ মাস আগেও সেখানে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর কয়েকটি সামরিক ব্যারাক ও সীমান্তচৌকি ছিল। টানা ১১ মাস যুদ্ধের পর জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সেনা ব্যারাকসহ পুরো মংডু টাউনশিপের ২৭১ কিলোমিটার এলাকা দখলে নেয় আরাকান আর্মি। বেশ কিছুদিন ধরে আরাকান আর্মির দখলে থাকা ব্যারাক ও সীমান্তচৌকি দখলে নিতে হামলা চালাচ্ছে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।

মিয়ানমারের গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, সামরিক জান্তা আরাকান আর্মির দখলে থাকা এলাকার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য সম্প্রতি নতুন করে অভিযান শুরু করেছে। যুদ্ধবিমানে করে আরাকান আর্মির অবস্থানে বোমা ফেলা হচ্ছে। তাতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।