
লাকী আক্তার বাবাকে হারিয়েছেন জন্মের পর। আর মাকে হারিয়েছেন দুই বছর আগে। এর পর থেকে বড় বোন নার্গিস আক্তারের সঙ্গে আছেন লাকী। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিপক্ষের লাগানো আগুনে বাড়ির সবকিছু পুড়ে গেছে ও লুট হয়ে গেছে। সব হারিয়ে এখন তাঁরা দিশাহারা।
আজ শুক্রবার দুপুরে খোলা আকাশের নিচে লাকীর পাশে বসে অভুক্ত সন্তানকে কোলে নিয়ে হু হু করে কাঁদছিলেন নার্গিস আক্তার। সকালে পেটে খাবার যায়নি। দুপুরে কী খাবেন, জানতে চাইতেই দুই বোন হাউমাউ করে কেঁদে বলে উঠলেন, ‘সব তো পুড়ে গেছে, কী খাব।’
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার চুনিয়াপাড়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিপক্ষের লোকজনের দেওয়া আগুনে প্রায় ২৮টি বাড়ি পুড়ে যায়। লাকী ও নার্গিস ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দুজন।
আজ শুক্রবার বিকেল চারটা পর্যন্ত পুলিশ ছাড়া কেউ তাঁদের খোঁজ নিতে আসেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কেউই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দেখতে আসেননি। এমনকি তাঁদের জন্য খাবার বা কোনো ত্রাণসামগ্রীও পাঠাননি কেউ।
এ বিষয়ে ইউএনও রাফিউল আলম বলেন, ‘আমরা বিকেলে ওখানে যাব। সেখানে থমথমে অবস্থা চলছে, ওরা নিজেরাও একটু ভয় পাচ্ছে। আজকে বিকেলে নয়তো কাল সকালে তাঁদের জন্য চাল ও কম্বল নিয়ে যাব।’
এদিকে আজ দুপুরে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার গ্রামের পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে জমি দখলকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় খোদাদাতপুর গ্রামের মনোয়ার হোসেন (২৪) ও রাকিব হোসেন (২৫) নামের দুজন নিহত হন। গতকাল দুপুরে দুজনের জানাজা চলছিল। এ সময় নিহত ব্যক্তিদের পক্ষের লোকজন চুনিয়াপাড়ায় বাড়ি বাড়ি ঢুকে অগ্নিসংযোগ করেন বলে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির লোকজন অভিযোগ করেছেন। অগ্নিসংযোগকালে লোকজন দেশি অস্ত্র লাঠি, দা নিয়ে প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালান। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে নারী, শিশু ও পুরুষেরা বাড়িঘর ছেড়ে দৌড়ে পালান।