প্রায় ৩৪ ঘণ্টা অনশন কর্মসূচি পালন করেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের ৯ শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে
প্রায় ৩৪ ঘণ্টা অনশন কর্মসূচি পালন করেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের ৯ শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে

চারুকলা ইনস্টিটিউট অবশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরছে, অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউট অবশেষে মূল ক্যাম্পাসে ফিরছে। আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তের পর শিক্ষার্থীরা তাঁদের চলমান আমরণ অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। প্রায় ৩৪ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙেন তাঁরা।

চারুকলার শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্রুত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরুরও আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। এ কারণে আমরা অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, চারুকলাকে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সমাবর্তনের পর এটি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, চারুকলা ইনস্টিটিউটকে ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ২ আগস্ট এটি নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে একীভূত হয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত। এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০০।

২০২২ সালের নভেম্বরে শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পর ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস বর্জনের পাশাপাশি তাঁরা ধারাবাহিকভাবে নানা কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।

দাবি না মানায় ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা দেন। পরে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় দিয়ে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি শর্ত সাপেক্ষে শ্রেণিকক্ষে ফেরেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় ৩১ জানুয়ারি আবারও অবরোধ শুরু হয়।

একই দিনে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ক্লাসে ফেরার দাবিতে অবস্থান নেয়। এর মধ্যেই ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি। পরদিন শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফিরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁদের কর্মসূচিতে হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা।

পরে সেশনজট কমাতে শিক্ষার্থীরা ৩ মে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। তবে দাবি আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। চলতি বছরের শুরুতে সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এপ্রিলের মধ্যে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন।

তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা গত সোমবার আবার আন্দোলনে নামেন। এরপরই সিন্ডিকেট সভায় চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়।