রাজশাহী ও কুষ্টিয়াসহ চার জেলার বিস্তীর্ণ পদ্মা নদীতে ‘কাকন বাহিনী’ স্পিডবোট নিয়ে নিয়মিত সশস্ত্র মহড়া দেয়। সম্প্রতি ড্রোন দিয়ে যার ভিডিও করে প্রশাসনকে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা
রাজশাহী ও কুষ্টিয়াসহ চার জেলার বিস্তীর্ণ পদ্মা নদীতে ‘কাকন বাহিনী’ স্পিডবোট নিয়ে নিয়মিত সশস্ত্র মহড়া দেয়। সম্প্রতি ড্রোন দিয়ে যার ভিডিও করে প্রশাসনকে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা

কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় সাঁড়া ইউনিয়নের ইসলামপাড়া। পদ্মায় ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছিলেন ইজারাদার সুলতান আলী বিশ্বাসের লোকজন। হঠাৎ নদীর কুষ্টিয়া প্রান্ত থেকে স্পিডবোট ও বড় নৌকায় আচমকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে ছুটে আসে একদল দুর্বৃত্ত। আতঙ্কে শ্রমিকেরা দৌড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। প্রায় ৫০টি গুলি করার ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও নদীপারের বেশ কয়েকটি বাড়ির টিনের বেড়া ও চালা গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এ ঘটনা ১৩ অক্টোবরের। স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগীরা বলছেন, বালুমহালের ইজারাকে কেন্দ্র করে এভাবে হঠাৎ এসে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করেন ‘কাকন বাহিনী’র সদস্যরা। বালু লুট, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, জমির দখল নিয়ে এই বাহিনীর সদস্যদের নামে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। তাঁদের কাছে এখন রাজশাহীর বাঘা, নাটোরের লালপুর, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বিস্তীর্ণ পদ্মার চরের মানুষেরা জিম্মি।

সর্বশেষ গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) দৌলতপুরের পদ্মা নদীর দুর্গম চরে এই বাহিনীর গুলিতে দুই কৃষক নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও দুজন। নিহত দুজন মণ্ডল গ্রুপের আমান মণ্ডল (৩৬) ও নাজমুল মণ্ডল (২৬) বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি বলছে, একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে কাকন বাহিনীর সদস্য লিটনও (৩০) নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানের নাম অনুসারে বাহিনীর নাম ‘কাকন বাহিনী’। এই বাহিনী পদ্মা নদীতে স্পিডবোট নিয়ে নিয়মিত সশস্ত্র মহড়া দেয়। সম্প্রতি ড্রোন দিয়ে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা তার ভিডিও ধারণ করে প্রশাসনকে দিয়েছেন। এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তারপরও কাকন বাহিনীর দাপটে এলাকার কৃষকেরা তাঁকে চাঁদা না দিয়ে ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। গত সোমবার কাশবন দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই গোলাগুলির সূত্রপাত ঘটেছিল।

বাহিনীটির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক) মোহাম্মদ শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আপনারা দেখতে পাবেন, পুলিশ এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্গম চরে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। এসব বাহিনীর সদস্যরা চরের বালু ও জমি দখল নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটান। তাঁরা এক চরে অপরাধ করে আরেক চরে গিয়ে আশ্রয় নেন। কখনো চরের বিশাল কলাবাগান, আবার একেবারে সীমান্তের শূন্যরেখায় মাঠের মধ্যে গিয়ে আস্তানা গড়ে তোলেন তাঁরা।
চার জেলাজুড়ে বিস্তৃত পদ্মার দুর্গম এই চরাঞ্চলে প্রায় ২০ বছর আগেও দুটি সন্ত্রাসী বাহিনীর উত্থান ঘটেছিল। তাদের ভাগ না দিয়ে কেউ চরের ফসল ঘরে তুলতে পারতেন না। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে তাদের হাতে ওই সময় ৪১ জন মানুষ খুন হন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তখন চরের মাটিতে পা দিতে গা ছমছম করত। দুই বাহিনীর নাম ছিল ‘পান্না বাহিনী’ ও ‘লালচাঁন বাহিনী’। পান্নার ওস্তাদ ছিলেন এই কাকন।

২০০৫ সালের ২৫ এপ্রিল প্রথম আলোতে ‘বাঘা-লালপুর দৌলতপুরের তিন গ্রামে পান্না বাহিনীর সন্ত্রাস, ৬০ পরিবার বাড়িছাড়া’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার কিছুদিন পরেই ‘ক্রস ফায়ারে’ পান্না নিহত হন। একইভাবে তাঁর প্রতিপক্ষ লালচাঁনসহ দুই বাহিনীর অন্তত ২৫ জন সদস্য নিহত হন। তারপর শান্ত হয়েছিল পদ্মার চর।

যেভাবে উত্থান ‘কাকন বাহিনীর’

বাহিনীর প্রধান মো. হাসানুজ্জামান কাকন ওরফে ইঞ্জিনিয়ার কাকন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মার চরাঞ্চলে বিভিন্ন ঘটনায় এ বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ‘কাকন বাহিনী’র বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে ঈশ্বরদী থানায় তিনটি, বাঘা, লালপুর ও দৌলতপুর থানায় একটি করে। ঈশ্বরদী থানার দুটি মামলা ও বাঘা থানার মামলাটি নৌ পুলিশ তদন্ত করছে। কোনো মামলার তদন্তই শেষ হয়নি।

একটি মামলার এজাহারে দেখা যায়, কাকনের পুরো নাম মো. হাসানুজ্জামান কাকন ওরফে ইঞ্জিনিয়ার কাকন। বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী কলেজ রোড। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, তাঁর পৈতৃক নিবাস কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামে। ২০০১ সালের দিকে এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর তিনি পরিবারসহ দৌলতপুর থেকে পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরদী উপজেলায় বসবাস শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে সিভিল বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করায় নামের আগে যুক্ত হয় ‘ইঞ্জিনিয়ার’।

২০০৫ সালে পান্না নিহত হওয়ার পর ২০০৭ সালে কাকন সৌদি আরবে চলে যান। কয়েক বছর পর ফিরে এসে আওয়ামী লীগের নেতাদের আশ্রয়ে এলাকার বালুমহালগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। এই বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েই তিনি গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। আধিপত্য বিস্তার, বালুমহল নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে কাকন বাহিনীর বিরুদ্ধে। পদ্মার চরের বালু থেকে সবকিছুতেই কাকন বাহিনীর হিস্যা থাকতে হবে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় কাকন বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ মামলা করতে সাহস পায়নি। সম্প্রতি কিছু ঘটনায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

চলতি বছর কাকন বাহিনীর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর দুটি তদন্ত করছেন ঈশ্বরদী নৌ পুলিশের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। কোনো মামলায় আসামিদের জামিনের কাগজও তাঁরা পাননি।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, মামলাগুলো জুন মাসে হয়েছে। এ জন্য এখনো তদন্ত শেষ হয়নি।


গুলিতে দুই কৃষক নিহত হওয়ার ঘটনায় গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলাতেও কাকন প্রধান আসামি বলে জানিয়েছেন দৌলতপুর থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ।

‘সব মজা দেখতে আসছে, গুলি কর’

গত ১২ জুলাই সকালে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন ঈশ্বরদীর মাজদিয়া চৌধুরীপাড়ার রাখাল সোহানুর রহমান (২৮)। সেদিন তিনি ঘাস কেটে বাড়ি ফেরার বদলে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। পরে সুস্থ হয়ে এসে গত ৩০ জুলাই তিনি কাকনসহ তাঁর বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা করেছেন।

সোহানুর রহমানের ভাষ্য, কাকন ও তাঁর লোকজন সেদিন সকালে ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের ইসলামপাড়া এলাকায় নদীতে বিভিন্ন নৌযানের মাঝি-মাল্লাদের মারধর করে চাঁদা আদায় করছিলেন। উৎসুক জনতা দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। কাকন নদীর ধারের লোকজন দেখে চিল্লাইয়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলতে থাকেন, ‘শা*রা সব মজা দেখতে আসছে, গুলি কর।’ সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পাশ থেকে একজন গুলি করে। এতে সোহান গুলিবিদ্ধ হন।

রাজশাহী ও কুষ্টিয়াসহ চার জেলার বিস্তীর্ণ পদ্মা নদীতে ‘কাকন বাহিনী’ স্পিডবোট নিয়ে নিয়মিত সশস্ত্র মহড়া দেয়। সম্প্রতি ড্রোন দিয়ে যার ভিডিও করে প্রশাসনকে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা

স্থানীয় লোকজন জানান, এ রকম ঘটনা প্রায় ঘটছে। তবে খুব কম ঘটনাতেই মামলা হচ্ছে। ৬ অক্টোবর সাঁড়া ইউনিয়নের সাঁড়া ঘাটে পদ্মা নদীর তরিয়া মহালে ইজারার টোল আদায়কে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনায় দুজন আহত হন। সে সময় দুর্বৃত্তরা ঘাট থেকে স্পিডবোট ও নৌকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তরিয়া মহালের ইজারাদার মেহেদী হাসান বাদী হয়ে পরের দিন ঈশ্বরদী থানায় কাকন বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। এর আগে বালুমহালের ইজারা ও বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে গত ২৬ মে গোলাগুলিতে সাতজন গুলিবিদ্ধ হন।

ইজারাদার মেহেদী হাসান বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, সব ঘটনার মূলনায়ক হচ্ছেন কাকন। সব মামলায় তাঁর বাহিনীর সদস্যরাই আসামি। তাঁর একটি মামলায় ভুলে কাকনের নাম বাদ পড়েছে।

কাকনের দাপট থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না খেটে খাওয়া মানুষেরাও। রাজশাহীর চকরাজাপুরের বালুমহালের ইজারাদারের স্পিডবোটের চালক সালমান বিশ্বাস তাঁদের একজন। তাঁর বাড়ি পাবনার ঢালারচর এলাকায়। বোটটি তিনি নিজ এলাকা থেকে ভাড়ায় এনে চালাচ্ছিলেন। কাকন বাহিনীর লোকজন তাঁকে গুলি করতে করতে ধাওয়া করে স্পিডবোটটি নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় তিনি রাজশাহীর বাঘা থানায় মামলা করেছেন। মামলাটি চারঘাট নৌ পুলিশ তদন্ত করছে।

গত ৫ জুলাই সকালের ওই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালমান বিশ্বাস বলেন, ‘ঈশ্বরদীর সাঁড়া ঘাট থেকে স্পিডবোট নিয়া আড়মবাড়িয়ার দিকে আমি আসছিলাম। সামনে একটা নৌকা ছিল বিলবাড়িয়া বাজারের সোজা। ওই নৌকা থেকে ওরা বন্দুক তাক করছে আমার দিকে। বন্দুক তাক করা দেখে আমি বোট ঘুরাইছি। ঘুরাইয়া ডাঙ্গার দিক যাচ্ছি। পিছনে চাইয়া দেখি, স্পিডবোট আসতেছে আরেকটা। সাদা কালারের একটা স্পিডবোট আইসে। ওরা আমারে বলছে, ‘‘দৌড়াইস না, দৌড়াইস না; দৌড়াইলে কলাম গুলি করব।’’ এটা বলতেছে আর গুলি করতেছে। আমি স্পিডবোট ডাঙ্গায় চাপা দিয়া, আমি ডাঙ্গায় উইঠা দৌড় দিছি বিলমাড়িয়া বাজারের দিকে।’

পিঠে থাকা গুলির দাগ দেখিয়ে সালমান বিশ্বাস আরও বলেন, ‘ওরা দুজন আমার পিছন পিছন আইসা নিচে নাইমা গুলি করতে করতে আসতেছে। পরে আমি বাড়িঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ছি। মানে যেই সময় আমি এক বাড়ির গেটে ঢুকতেছি, গেটে ঢোকার সময় আমার এই গুলিটা লাগছে।’ হামলাকারীদের চিনতে পেরেছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘এগুলো ছিল কাকনের লোক। সে সময় গুলি লাগছে। গুলি লাগার পরে একটু বাড়িঘরের মধ্যে দাঁড়াইছি, এক বাড়ি যাইয়া পালাইছি। আমি পরে চাইয়া দেখলাম, আমার স্পিডবোট নিয়া চলে গেছে।’

কাকন বাহিনীর এমন তৎপরতার খবর পেয়ে গত ১৭ জুলাই নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ ও বালুবোঝাই নৌকা থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ দিনভর নাটোরের দিয়াড়বাহাদুর মোল্লা ট্রেডার্সের বালুমহালে কাকন বাহিনীর আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৩টি পিস্তল, ৪৮টি গুলি, মানুষের মাথার খুলি, মাদকদ্রব্য ও ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা উদ্ধার করে।

এই অভিযানে ছিলেন ঈশ্বরদী নৌ পুলিশের উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যেটাকে আস্তানা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে বালু তোলার গাড়িকে স্লিপ দেওয়ার ঘর। সেখান থেকেই মাথার খুলি পাওয়া গেছে। সেই ঘর এবং ইদ্রিস নামের একজন আসামির বাড়ি থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান শেষে সেনাবাহিনী এই তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে কাকন বা তাঁর বাহিনীর কোনো সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

পরে প্রথম আলো অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশের পর শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন হাসানুজ্জামান কাকন। তিনি দাবি করেন, পদ্মার চরের দিয়াড়বাহাদুরপুর বালুঘাটটি তাঁরা বৈধভাবে ইজারা নিয়েছেন। এই ঘাটের অনেক ছোট ছোট অংশীদার রয়েছে, এজন্য তাদের অনেক লোক বা কর্মচারী রয়েছে। সে হিসেবে তার লোক বেশি। তাই বলে এটাকে বাহিনী বলা উচিত নয়। তিনি বলেন, তারা যেহেতু বৈধ ঘাটের ব্যবসা করেন সেখানে নিজেরাই তো অন্যের ওপর চাঁদাবাজি করার প্রশ্ন উঠে না। চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা।

গুলি করে স্পিডবোর্ড ছিনতাই করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের বোট অন্যেরা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। থানায় তাঁর নামে যতগুলো অভিযোগ বা মামলা দেওয়া হয়েছে সবগুলোই এরকম ষড়যন্ত্রমূলক। পদ্মার চরে গোলাগুলিতে তিন ব্যক্তি নিহত হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ওই ঘটনার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তিনি সেখানে ছিলেন না। অনেকদিন এলাকায় যাননি। এই মামলাটাও তার নামে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে করা হয়েছে। এটা যে মিথ্যা মামলা তিনি প্রমাণ করবেন।

কাকন দাবি করেন, তাঁর নানার বংশের পদ্মার চরে ১ হাজার ৮০০ বিঘা জমি ছিল। ফলে যেখানেই নতুন চর জাগে তার নানাদের জমি থাকে। তারপরেও তারা নিজেরা কখনো ওই জমি দখল করতে যান না।

তিনি অভিযোগ করেন, তাদের লোকজনের ওপরে গত ৫ আগস্টের পর থেকে অত্যাচার করা হচ্ছে। তারা মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা এইসব অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার তদন্ত হয়েছে। তাতে প্রমাণিত হয়েছে তারা এই সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন।

দুর্গম চরে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান

দুই বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার দৌলতপুর উপজেলার দুর্গম চরে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে জেলা পুলিশ। ১২০ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সাত ঘণ্টায় হত্যা মামলার কোনো আসামিকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, এই অভিযানে চরবাসীরা খুবই খুশি। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর আবেদের ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ। তারা বিভিন্ন চরের গ্রামগুলোতে যায়। কোনো কোনো চরে নৌকা রেখে ৫-৬ কিলোমিটার হেঁটে গ্রামের ভেতর প্রবেশ করে। গ্রামের বাসিন্দারা পুলিশদের দেখে খুশি হন। তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন, কাকন বাহিনীসহ আরও কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠনের ভয়ে থাকেন তাঁরা। জমি দখলসহ ফসল কেটে নিয়ে যায় এই গোষ্ঠীগুলো। চাঁদাবাজি করে তারা। সম্প্রতি সময়ে সেটা আরও বেড়েছে। পুলিশের এমন অভিযান চলমান রাখার দাবি জানান এলাকার লোকজন।

বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) ফয়সাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখন নৌকাতে বাঘা সীমান্তে রয়েছি। সাত ঘণ্টায় বেশ কয়েকটি চরে অভিযান চলেছে। দিনের এই অভিযান রাতেও চলবে। অভিযান শেষ হবে না। এটা যে শুধু আসামি ধরা, তা নয়। মানুষকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় এই চরগুলোতে আর হবে না।’

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন তৌহিদী হাসান, কুষ্টিয়া]