অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের পথরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন গাজীপুরের টঙ্গীতে প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট ও মৈত্রী শিল্পের চাকরিচ্যুত প্রতিবন্ধী শ্রমিকেরা। এ সময় তাঁরা অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের দ্রুত পুনর্বহাল এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণের দাবি জানান।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট ও মৈত্রী শিল্পের প্রধান ফটকে এ ঘটনা ঘটে। পরে উপদেষ্টা তাঁদের অভিযোগ শোনেন এবং তদন্তের আশ্বাস দিলে প্রতিবন্ধী শ্রমিকেরা ঘরে ফিরে যান।
এর আগে উপদেষ্টা টঙ্গীতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট ও মৈত্রী শিল্প কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে প্রতিবন্ধী কর্মীদের হাতে তৈরি মুক্তা ড্রিংকিং ওয়াটার, প্লাস্টিক সামগ্রী এবং বিভিন্ন উৎপাদন ইউনিট ঘুরে দেখেন। উৎপাদন মান, কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা এবং কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।
পরিদর্শন শেষে মুক্তা ড্রিংকিং ওয়াটার কারখানায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা বলেন, ‘মুক্তা পানি বাণিজ্যিকভাবে উন্নত মানে উৎপাদন নিশ্চিত করতে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। এই ব্র্যান্ডকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। মৈত্রী শিল্পকে আরও সুশৃঙ্খলভাবে ও টেকসইভাবে এগিয়ে নিতে ধারাবাহিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
এ সময় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ এবং মৈত্রী শিল্পের নির্বাহী পরিচালক কাজী মাহবুবুর রহমান ও কারখানা ব্যবস্থাপক মহসিন আলী উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা বের হওয়ার সময় প্রধান ফটকে বেশ কয়েকজন চাকরিচ্যুত প্রতিবন্ধী শ্রমিক ও কর্মচারী তাঁর গাড়ি আটকে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ করেন, ২০১৪ সাল থেকে চলমান অনিয়ম, দুর্নীতি ও পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে অসংখ্য প্রতিবন্ধী কর্মীকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অথচ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা উপদেষ্টার হাতে একটি লিখিত স্মারকলিপিও তুলে দেন। সেখানে আরও বলা হয়, চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাঁরা জীবিকার তাগিদে সরকারের কাছে পুনর্বহাল ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানাচ্ছেন।
চাকরিচ্যুত শ্রমিক ইমরান বলেন, ‘আমরা যারা প্রকৃত প্রতিবন্ধী, আমাদের চাকরি ছিল জীবনের আশ্রয়স্থল। অথচ আমাদের অন্যায়ভাবে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন অনেকেই ঋণগ্রস্ত ও অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।’
এ সময় উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি মনোযোগসহকারে অভিযোগ শুনে বলেন, ‘আমি আপনাদের অভিযোগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করব। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হবে। কেউ অন্যায় করলে ছাড় দেওয়া হবে না।’ তাঁর এই আশ্বাসের পর শ্রমিকেরা ফিরে যান।
প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কিছু প্রক্রিয়াগত কারণে কিছু কর্মীর চাকরি স্থগিত হয়েছিল। তবে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছেন এবং দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি প্রাথমিক তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।