গাছতলায় পড়ে থাকা শিউলি ফুল কুড়াতে আসে শিশুরা। রাজশাহী নগরের বুধপাড়া পুরোনো মসজিদ মোড়ে
গাছতলায় পড়ে থাকা শিউলি ফুল কুড়াতে আসে শিশুরা। রাজশাহী নগরের বুধপাড়া পুরোনো মসজিদ মোড়ে

শিউলি ফুলে ভরা গাছতলা, ফিরিয়ে আনে শৈশবের সকাল

রাজশাহী নগরের পুরোনো মসজিদের সামনে রেললাইন ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে শিউলিগাছটি। সাদা–কমলা ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো গাছ। ভোরের আলো ফোটার আগেই ফুলে ফুলে ভরে যায় গাছতলা। ৩০ বছর ধরে এভাবেই নিরবচ্ছিন্নভাবে সৌন্দর্য ও সৌরভ বিলিয়ে যাচ্ছে গাছটি।

রাজশাহী নগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বুধপাড়ায় গাছটি দাঁড়িয়ে আছে। আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে রেললাইনের জমিতে বাঁশের বেড়া ও টিনের চালা দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এখানে সকালে মক্তবে শিশুদের আরবি ও ধর্মীয় শিক্ষা দিতেন স্থানীয় মো. শামসুজ্জামান। তাঁর একটি ওষুধের দোকান ছিল। মসজিদ প্রাঙ্গণে তিনি নানা ধরনের ফুলের গাছ লাগাতেন, যত্ন নিতেন। তাঁর বড় ভাই রুয়েটের সহকারী রেজিস্ট্রার (হিসাব শাখা) ইয়াহিয়া বাবু ১৯৯২ সালে শিউলিগাছটি লাগিয়েছিলেন।

সম্প্রতি এক ভোরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সবুজ পাতার ওপর দিয়ে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে সাদা–কমলা রঙের শিউলি ফুল। সামান্য বাতাসেই উড়ে উড়ে পড়ছে। গাছের নিচে একেবারে ফুলের চাদর!

প্রতিদিন ভোরে এখানে ফুল কুড়াতে আসে এই এলাকার শিশুরা। কেউ ফুল দিয়ে মালা গাঁথে, কেউবা বাড়ি নিয়ে সাজিয়ে রাখে। কেউ কেউ পূজার জন্য ফুল কুড়াতে চলে আসে। কয়েক শিশুকে দেখা গেল পলিথিনে ও হাতের মুঠোয় করে ফুল কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা বলল, রোজই তারা ফুল কুড়াতে আসে। তাদের শিউলি ফুলের ঘ্রাণ খুব ভালো লাগে।

গাছটি লাগিয়েছিলেন ইয়াহিয়া বাবু। আর যত্ন করেছেন তাঁর ভাই মো. শামসুজ্জামান। শিউলিগাছের নিচে দাঁড়িয়ে সেই গল্প শোনালেন শামসুজ্জামান

ইয়াহিয়া বাবুর ভাই মো. শামসুজ্জামান বলেন, তাঁর ভাই গাছটি লাগালেও তিনিই মূলত যত্ন নিতেন। স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বলেন, তাঁদের বাবা শিউলি ফুল খুব ভালোবাসতেন। ওনার কথাতেই ভাই গাছটা লাগিয়েছিলেন।

শামসুজ্জামান জানান, ১৯৯০ সালের দিকে বুধপাড়ায় রেলস্টেশনের পাশেই বাঁশের বেড়া দিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদ প্রাঙ্গণকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে তখন তিনি নিজ হাতে বেলি, রক্তজবা, গাঁদা, হাসনাহেনাসহ নানা ফুলের গাছ লাগিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মসজিদটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়। পুরোনো মসজিদটি এখন পরিত্যক্ত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেছে অন্য সব ফুলের গাছ, শুধু কালের সাক্ষী হয়ে থেকে গেছে ৩০ বছরের পুরোনো এই শিউলিগাছ।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক শাহিনুর আশিকের বেড়ে ওঠা এই গাছ দেখতে দেখতেই। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স ৩০। গাছটিও এই বয়সীই হবে। ছোটবেলা থেকেই গাছটিকে এভাবেই দেখে আসছি। গাছের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার যাওয়ায় প্রতিবছর ডালপালা ছেঁটে দেওয়া হয়, না হলে এটি আরও অনেক বড় হতো।’