নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর। গতকাল তোলা
নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর। গতকাল তোলা

নোয়াখালীতে চর দখলের সংঘর্ষে নিহত আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার মেঘনাবেষ্টিত জাগলার চরের জমি দখলকে কেন্দ্র করে বিবদমান তিনটি সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় নিহত আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ওই ব্যক্তির নাম শামছুদ্দিন ওরফে কোপা শামছু (৫৫)। তিনি ‘সন্ত্রাসী’ শামছু বাহিনীর প্রধান হিসেবে পরিচিত।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চরের বনের ভেতর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উদ্ধার করা লাশটি নিয়ে পুলিশ এখনো থানায় ফেরেনি।

পুলিশ জানায়, নিহত শামছুদ্দিন হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। নিহত অন্য পাঁচজন হলেন ‘সন্ত্রাসী’ আলাউদ্দিন বাহিনীর প্রধান আলাউদ্দিন, মোবারক হোসেন, আবুল কাশেম, হক সাব ও কামাল উদ্দিন। তাঁদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার রাতে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় আজ সকালে হাতিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত শামছুদ্দিনের ছোট ভাই আবুল বাশার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার এজাহারে ৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে একই ঘটনায় নিহত অপর বাহিনী প্রধান আলাউদ্দিনের পরিবারের কেউ এখনো মামলা করতে থানায় যাননি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হাতিয়া থানার ওসি মো. সাইফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে এরই মধ্যে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।

গত মঙ্গলবার হাতিয়া উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডসংলগ্ন মেঘনায় জেগে ওঠা নতুন জাগলার চরের দখল নিয়ে তিনটি সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। বাহিনীগুলো হলো কোপা শামছু, আলাউদ্দিন ও ফরিদ কমান্ডারের নেতৃত্বাধীন দল। সংঘর্ষে তিন পক্ষের লোকজনই কমবেশি হতাহত হন। খবর পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কোপা শামছুর ছেলে মোবারক হোসেনসহ আবুল কাশেম, হক সাব ও কামাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে। এ ছাড়া আলাউদ্দিনের লাশ জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়। অজ্ঞাতনামা লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চরের জমি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দখলের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর। প্রথমে হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়নের কোপা শামছু বাহিনী জমি দখলে নিয়ে বিক্রি শুরু করে। পরে সুখচর ইউনিয়নের আলাউদ্দিন বাহিনীও ওই চরে জমি দখল করে বিক্রিতে নামে। একপর্যায়ে তারা জাগলার চরের খাসজমিও বিক্রি করতে শুরু করে। বাহিনীর সদস্যরা প্রতি একর জমি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে আসছিলেন। কয়েক মাস আগে এই দুই বাহিনীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যুক্ত হয় ফরিদ কমান্ডারের বাহিনী। এরপর থেকেই তিনটি বাহিনীর মধ্যে দখল নিয়ে বিরোধ ও সংঘর্ষ চলছিল। সর্বশেষ ঘটনায় দুই বাহিনীর দুই প্রধানসহ মোট ছয়জন নিহত হয়েছেন।