
বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ৩৭ কিলোমিটার মহাসড়কে ১৭টি ভয়ংকর বাঁকে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। পটুয়াখালীর শাখারিয়া থেকে বরগুনার আমতলী উপজেলার বান্দ্রা পর্যন্ত ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। গত ছয় মাসে শতাধিক দুর্ঘটনায় অন্তত ১০ জনের প্রাণ ঝরেছে। আহত হয়েছেন সাড়ে চার শতাধিক।
বাসচালক ও এলাকাবাসী বলছেন, প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাঁকে দুর্ঘটনা ঘটছে। তবু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
আমতলী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভর্তি ও মৃত্যু বিবরণী থেকে পাওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে এসব বাঁকে শতাধিক দুর্ঘটনায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন ৪৫০ জন। এ ছাড়া চলতি জুলাই মাসের ১৯ দিনে ১২টি দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু এবং অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শতাধিক পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি আমড়াগাছিয়া এলাকার রহমান পেট্রলপাম্পের সামনে ঢাকাগামী একটি বাসের সঙ্গে মাহেন্দ্রর মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। গত ৯ এপ্রিল মহাসড়কের সিকদারবাড়ি এলাকায় তেলবাহী ট্যাংকারের চাপায় মো. খলিলুর রহমান (৪৫) নামের এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়। ২১ জুন কেওয়াবুনিয়া বাঁকে একটি যাত্রীবাহী বাস একটি ইজিবাইককে চাপা দিলে একই পরিবারের চার সদস্য মারা যান। সব কটি দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল বাঁক ঘুরতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারানো কিংবা দুই যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ।
সরেজমিন দেখা যায়, শাখারিয়া, ব্রিক ফিল্ড, কেওয়াবুনিয়া, মহিষকাটা, চুনাখালী, আমড়াগাছিয়া খানকা, ডাক্তারবাড়ি, তুলাতলী, ছুরিকাটা, খুড়িয়ার খেয়াঘাট এলাকায় অন্তত ১৭টি ভয়ংকর বাঁক আছে। এসব বাঁকে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ বাঁকে কোনো কার্যকর সংকেতচিহ্ন নেই। যেটুকু সাংকেতিক চিহ্ন রয়েছে, তা-ও অস্পষ্ট এবং দূর থেকে দেখা যায় না।
বাসচালক জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে গাড়ি ৮০ বা ৯০ কিলোমিটার গতিতে চলে। ইচ্ছা করলেই গাড়ি হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বাঁকগুলো এত ভয়ংকর যে এক পাশ থেকে অন্য পাশ দেখা যায় না। বাঁকগুলোতে যে নির্দেশক দেওয়া আছে, তা অস্পষ্ট এবং দূর থেকে দেখা যায় না। বিশেষ করে রাতের বেলা সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
মজিবর রহমান নামের আরেক চালক বলেন, ২০২৪ সালে পায়রা ফিলিং স্টেশন ও ছুরিকাটা বাঁকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সংকেতবাতি স্থাপন করেছিল। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সেটি অকেজো হয়ে পড়ে। পরে সেটি আর সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে ওই দুটি স্থানে একটি বাতিও কাজ করছে না।
চালকেরা বলছেন, মূলত এ ধরনের বড় বাঁকে গ্লাসের (কনভেক্স মিরর) নির্দেশক স্থাপন করা উচিত, যাতে চালকেরা দূর থেকে আসন্ন বাঁকের বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন দেখতে পারেন এবং দুর্ঘটনা এড়াতে পারেন।
বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের খুড়িয়ার খেয়াঘাট এলাকার বাঁকটি খুবই ভয়ংকর। এখানে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। আমিনুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, খুড়িয়ার খেয়াঘাট এলাকার বাঁকটি খুবই বিপজ্জনক। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। নির্দেশক না থাকায় চালকেরা সতর্ক হতে পারেন না।
দূরপাল্লার একটি বিআরটিসি বাসের চালক রহমত আলী বলেন, বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের বাঁকের শেষ নেই। বিশেষ করে পটুয়াখালী থেকে আমতলীর বান্দ্রা—এই ৩৭ কিলোমিটার অত্যন্ত বিপজ্জনক। দুটি স্থানে সংকেতবাতি থাকলেও একটি অনেক দিন ধরে অকেজো।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) সংগঠনের বরিশালের সভাপতি মো. রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর মহাসড়কে যান চলাচল বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু সেই তুলনায় সড়কের অবকাঠামো হয়নি। পুরো মহাসড়কে অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। তাঁরা চান, গাড়িগুলো একমুখী চলবে। সেভাবে সড়কের অবকাঠামো ও সড়ক পারাপারে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হোক। পাশাপাশি মহাসড়কের পাশের বাজারগুলো দ্রুত উচ্ছেদ করে সড়কে শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।
মহাসড়কের এ অংশটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে সওজের বরগুনা কার্যালয়। কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কুমারেশ বিশ্বাস বলেন, মহাসড়কটির ওই ৩৭ কিলোমিটারের বাঁকগুলোর ঝুঁকি বিবেচনায় কয়েকটি স্থানে সংকেতবাতি স্থাপন করা হয়েছে। কিছু বাকি আছে। সেগুলোতে বাতি স্থাপন করা হলে সমস্যা থাকবে না। তিনি বলেন, যেসব এলাকার সড়ক নির্দেশক মুছে গেছে, সেগুলো দ্রুতই পুনর্নির্মাণ করা হবে।