আ.লীগে ঢুকতে মরিয়া লতিফ-কাদেরের ভাই মুরাদ সিদ্দিকী, ঠেকাতে তৎপরতা

২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুরাদ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৫ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন
ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের আলোচিত সিদ্দিকী পরিবারের সন্তান মুরাদ সিদ্দিকীর আওয়ামী লীগে যোগদান ও জেলা কমিটিতে পদ পাওয়ার বিষয়ে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে। তাঁকে জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে দলের কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন। তবে মুরাদ সিদ্দিকীকে দলে নেওয়ার ঘোরবিরোধী জেলার কয়েকজন সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি অংশ।

মুরাদ সিদ্দিকী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের সিদ্দিকী এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ভাই। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করা হবে। এ অবস্থায় মুরাদ সিদ্দিকী জেলা আওয়ামী লীগে পদ পাচ্ছেন, নাকি এবারও দলে ঢুকতে ব্যর্থ হচ্ছেন—এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ১৯৯৯ সালে কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ছেড়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে নতুন দল গঠন করেন। মুরাদ সিদ্দিকী তখন ভাই কাদের সিদ্দিকীর দলে যোগ দেন। ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। এরপর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি টাঙ্গাইল-৫ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।

মূলত ২০০৯ সাল থেকে মুরাদ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ২০১৫ সালে মুরাদ সিদ্দিকীর অনুসারী টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জামিলুর রহমান ওরফে মিরনসহ অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তাঁরা পরবর্তী সময় জেলা আওয়ামী লীগে পদ-পদবিও পান। কিন্তু মুরাদ সিদ্দিকী যোগ দিতে ব্যর্থ হন। দলে ঢুকতে না পারলেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি এবং দলীয় কার্যালয়ে মুরাদ সিদ্দিকী যাতায়াত শুরু করেন।

গত বছরের ৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে মুরাদ সিদ্দিকী মিছিল নিয়ে যান

গত ৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সেখানে মুরাদ সিদ্দিকী বড় মিছিল নিয়ে অংশ নেন। সম্মেলনে ফজলুর রহমান খানকে সভাপতি এবং সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এখনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি।

মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের আদর্শের বাইরে কেউ নই। সব সময়, সব অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেছি। আওয়ামী লীগের সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছি। দল যদি আমাকে কোনো দায়িত্ব দেয়, তা পালন করার জন্য প্রস্তুত আছি। এ জেলার কৃতী সন্তান দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, জেলা শাখার সভাপতি ফজলুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের নেতৃত্বে আমি কাজ করতে চাই।’

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে জেলার নেতাদের বলা হয়েছে মুরাদ সিদ্দিকীকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখার জন্য। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ এবং কয়েকজন সংসদ সদস্য চান না মুরাদ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে পদ পাক। তাঁরা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে মুরাদ সিদ্দিকীর পদপ্রাপ্তি ঠেকাতে চেষ্টা করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও একাধিক সংসদ সদস্য বলেন, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে জেলা আওয়ামী লীগ ভালো চলছে। মুরাদ সিদ্দিকীকে দলে পদ দেওয়া হলে আবার একটি নতুন বলয় সৃষ্টি হতে পারে। তাই তাঁরা এ মুহূর্তে মুরাদ সিদ্দিকী দলে আসুক, তা চান না। তিনি দলে এলে টাঙ্গাইল সদর অথবা কালিহাতী আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর যোগদান ওই আসন দুটির বর্তমান সংসদ সদস্যদের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ‘মুরাদ সিদ্দিকী দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগে যোগদানের চেষ্টা করছেন, এটা সত্য। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম “আলোচনা সাপেক্ষে তাঁকে নেওয়া যেতে পারে” বলে কিছুটা সম্মতি দিয়েছেন। আগামীকাল বা পরশু আমরা বসব। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান সাহেব আছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’