সিলেটের পাঁচটি পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে একাত্মতা জানিয়ে বিএনপি ও জামায়াত নেতারা অংশ নেন। আজ মঙ্গলবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে
সিলেটের পাঁচটি পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে একাত্মতা জানিয়ে বিএনপি ও জামায়াত নেতারা অংশ নেন। আজ মঙ্গলবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে

পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে মানববন্ধনে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতাদের একাত্মতা

সিলেটে পাথর কোয়ারিগুলো ইজারা দিয়ে আবারও চালুর দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে যোগ দিয়ে একাত্মতা জানিয়েছেন সিলেটের বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ ছয় নেতা। এ ঘটনার সমালোচনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি হয়। সিলেট জেলা পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই মানববন্ধন শেষে নগরে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এতে অংশ নেন তিনটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা।

কর্মসূচিতে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগরের আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও জেলার সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন ও মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরীসহ দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী কিম প্রথম আলোকে বলেন, বিগত সরকারের সময়ে সিলেটের পাথর লুটের নেপথ্যে ছিলেন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও জেলা-উপজেলার নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় পাথর লুট হয়েছে। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ লুটপাটের সুযোগ হারালেও লুট অব্যাহত আছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিলেটের পাথর–রাজ্য লুটপাটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১০ মাসে হাজার কোটি টাকার পাথর লুটের অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় পাথর কোয়ারি খোলার দাবিতে আয়োজিত কর্মসূচিতে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের অংশগ্রহণ অনভিপ্রেত।

সিলেটের পাঁচটি পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন। আজ মঙ্গলবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে

প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় দেশের ৫১টি পাথর কোয়ারির মধ্যে ১৭টির ইজারা স্থগিত রেখেছে সরকার। ইজারা স্থগিত রাখা কোয়ারির মধ্যে অধিকাংশই সিলেটে। এর পর থেকে সিলেটের পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ইজারা চালু করে কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবি জানান। ১৪ জুন জাফলং পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে জাফলংসহ সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি ভবিষ্যতে ইজারা দেওয়া হবে না বলে জানান তাঁরা।

পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ‘যে ব্যবসার ওপর দাঁড়িয়ে ১০ লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত, যে পাথর কোয়ারি অত্র জনপদের মানুষ তাদের কাছে একটি পবিত্র আমানত হিসেবে মনে করত, সেই পাথর কোয়ারি বন্ধ করে দিয়ে ১০ লাখ মানুষের পেটে লাথি মারা হয়েছে। আমাদের সেই সীমান্তবর্তী এলাকার মধ্যে ১০০ গজ দূরবর্তী জায়গায় পাহাড়-টিলা ধ্বংস করে ডিনামাইট ফাটিয়ে পাথর ভেঙে সেই পাথর বাংলাদেশে এলসির মাধ্যমে নিয়ে আসা হচ্ছে। সেই এলসি কাদের স্বার্থে করা হয়েছে, এটি আমাদের ভেবে দেখতে হবে।’

সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম বক্তব্যে বলেন, ‘যে বা যারাই পরিবেশের দোহাই দিয়ে এখানে পাথর–বালু উত্তোলনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে, তাদের আদৌ আরও কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটা এখন খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।’

মানববন্ধন শেষে পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। আজ মঙ্গলবার বিকেলে

সিলেট বিভাগে পাঁচটি কোয়ারির ইজারা স্থগিত রয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা কর্মসূচিতে এসব দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবি জানান। এ সময় দ্রুত কোয়ারি খুলে দেওয়া এবং ট্রাকশ্রমিকদের গাড়ি তল্লাশির নামে হয়রানি, সিলেটের ক্রাশার মিলের মালিকদের হয়রানি বন্ধ করে ব্যবসার সুযোগ দিতে আবারও মিটার ফেরত দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

বক্তারা জানান, দাবি আদায়ে ২৮ জুন থেকে সিলেটের সব পাথর কোয়ারি থেকে ৪৮ ঘণ্টা লোড-আনলোডে কর্মবিরতি, ৩০ জুন থেকে জেলার সব পণ্য পরিবহনে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি এবং আগামী ২ জুলাই থেকে জেলায় সব ধরনের পণ্য পরিবহন ও গণপরিবহনে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করা হবে।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের বিষয়ে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনষ্ট করে পাথর উত্তোলন হোক, এটা আমরাও চাই না। আমরা চাই প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হোক।’

রাজনৈতিক নেতাদের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। অথচ রাজনৈতিক নেতারা এখানে অংশ নিয়ে বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইস্যুতে নিয়ে যাচ্ছেন, এটা দুঃখজনক। কিছু ক্ষেত্রে পাথর উত্তোলনে আদালতেরও নিষেধাজ্ঞা আছে। তাই রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশা করি না। আমরা পরিবেশ রক্ষায় তাঁদের সহযোগিতা চাই।’