কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

‘অঞ্জলি লহ মোর’ ফেরানোর দাবি শিক্ষার্থীদের, কমিটি গঠিত

ময়মনসিংহের ত্রিশালের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটির বেশ কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। গত বুধবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটির বেশ কিছু অংশ ভাঙার পর এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ১৫ সদস্যের এ কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পর প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে ভাস্কর্যটির বিষয়ে আসলে কী করা হবে।

এদিকে কবি নজরুলের সাহিত্য–প্রভাবিত অঞ্জলি লহ মোর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদ এবং আগের নকশায় সংস্কারের দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। আজ রোববার বিকেলে তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ ভবনের সামনের পুকুরের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নির্মাণ করা হয় অঞ্জলি লহ মোর ভাস্কর্য। ভাস্কর মনিন্দ্র পাল এটি নির্মাণ করেছিলেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে অক্টোবরে শেষ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি চলাকালে গত মঙ্গলবার ভাস্কর্যটি ভাঙা শুরু হয়। ভাস্কর্যটির বেশ কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। পরে এ নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হলে ভাঙার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এস এম হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়। উপাচার্য অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে আজ উপাচার্যের কার্যালয়ের কক্ষসংলগ্ন সম্মেলনকক্ষে লোকাল প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির সভায় এই সংস্কার কমিটি গঠন করা হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকীকে কমিটির আহ্বায়ক ও উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল ইসলামকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।

জনসংযোগ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এস এম হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অঞ্জলি লহ মোর ভাস্কর্য নকশায় ছিল কি না, যাঁরা পরামর্শক ছিলেন, তাঁরা কী পরামর্শ দিয়েছিলেন, ভাস্কর্যটি নকশা অনুযায়ী করা হয়েছিল কি না, এ বিষয়গুলো নিয়ে কমিটি কাজ করবে। কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পর প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে ভাস্কর্যটির বিষয়ে প্রশাসন আসলে কী করবে।

এদিকে উপাচার্যকে দেওয়া শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আমরা গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা লক্ষ করেছি, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুলের সাহিত্য–প্রভাবিত ভাস্কর্য অঞ্জলি লহ মোর প্রশাসনের সহায়তায় ভাঙচুর হয়েছে। আমরা এ ঘটনার গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানাই। কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির ধারক–বাহক। কবি নজরুলের আদর্শকে ধারণ করার পরিবর্তে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল–আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ড হচ্ছে, যা গণ–অভ্যুত্থানে যে বহুমতের মিলন হয়েছিল, সে চেতনার বিরোধী। তাই আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ভাস্কর্যের সংস্কার চাই। আমাদের স্পষ্ট দাবি হচ্ছে, ভাস্কর্য না ভেঙে সংস্কার করে পূর্বের ডিজাইনে ফিরিয়ে নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়কারীদের শাস্তি দিতে হবে এবং তাঁদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করতে হবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন, তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।