
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে জাতি-বর্ণ-ধর্মনির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে বসবাস করে। এ দেশে দল হিসেবে আমরা বিএনপি মনে করি, এখানে নাগরিক হিসেবে আমরা সবাই বাংলাদেশি। যে কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সব জাতি-উপজাতি গোষ্ঠী কিংবা পাহাড়-সমতলের সবারই সমানভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। একজনও যদি বিরোধী মতের থাকেন, তারও মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে।’
আজ শনিবার দুপুরে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর এলাকায় ‘ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কায়সার কামাল বলেন, একজন মত প্রকাশে বাধাগ্রস্ত হলেও, বিষয়টি কোনোভাবে কাম্য নয়। আমাদের সংবিধানেও বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ‘আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতার কর্মসূচিতে’ যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা নিন্দনীয়। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই আর কোনো নিষ্প্রেষণমূলক ও জনস্বার্থবিরোধী রাজনীতি দেশে চলবে না। রাষ্ট্রের নীতিমালা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘিষ্ঠ জাতি-ধর্ম-গোষ্ঠী-গোত্র-সম্প্রদায়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাহলেই প্রত্যাশিত ভেদাভেদহীন, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ রচিত হবে।
বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর চলতি বছর নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যাশা করে জানিয়ে কায়সার কামাল বলেন, ‘আমরা বলছিলাম একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হোক। কারণ, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে এবং সংস্কার কমিশন প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে, তাই সংসদ নির্বাচন দ্রুত করা সম্ভব।’
সংস্কার বিষয়ে কায়সার কামাল বলেন, ‘সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সংস্কার করবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। সংস্কার কমিশন একটা প্রস্তাবনা দেবেন, সেটি সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সংবিধানের অ্যামেন্ডমেন্ট দরকার। আর সেই অ্যামেন্ডমেন্টের জন্য একটা সংসদ দরকার।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘দেশে আসার ব্যাপারে তাঁর (তারেক রহমান) আইনগত কোনো বাধা বা ঝামেলা নেই। আপনাদের জানিয়ে রাখা ভালো, তিনি (তারেক রহমান) আইনের শাসনের প্রতি বিশ্বাসী ও শ্রদ্ধাশীল। তাঁর মামলা আইনগতভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। তিনি যেকোনো সময় দেশে আসতে পারেন।’
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নাজিরপুর ঈদগাহ মাঠে ‘ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প’ অনুষ্ঠানটি ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সহযোগিতা করে। দিনব্যাপী এখানে কলমাকান্দা ও পাশের দুর্গাপুর থেকে অন্তত পাঁচ হাজার রোগীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হয়। শিশু, স্ত্রীরোগ, হৃদ্রোগ, অর্থোপেডিক, মেডিসিন, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেন অন্তত ৪৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
সীমান্তবর্তী ফুলবাড়ী এলাকার বাসিন্দা সত্তোরোর্ধ রহিমা বেগম দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা নিতে পারছিলেন না। আজ বেলা একটার দিকে তিনি তাঁর নাতি মফিজ মিয়াকে (২৮) সঙ্গে নিয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে নাজিরপুর ঈদগাও মাঠে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘টেহার অভাবে বালা ডাক্তার দেখাইতে পারতাছি না। আইজ ব্যারিস্টার জন্য বালা ডাক্তার দেহাইতে পারছি। সঙ্গে কিছু ওষুধও পাইছি। আমার নাতিডারেও গ্যাস্ট্রিকের ডাক্তার দেখাইছি।’