রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডকে প্রশাসনিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ২৩ জুন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গণশুনানি হওয়ার কথা ছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা কী কারণে এই গণশুনানি করলেন না? কেন তাড়াহুড়া করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করছেন? এ কারণে তাঁরা তদন্তপ্রক্রিয়ার ওপর অনাস্থা প্রকাশ করছেন।
প্রসঙ্গত, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২৪ জুন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন জমা দেয় সংস্থাটি। আজ দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তিনি জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামসহ ৩০ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরীও (আকাশ) এ মামলার আসামি। তবে অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করবেন না বলে জানান মিজানুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যতগুলো সংবাদ সম্মেলন করেছেন, সেখানে তাঁরা বারবার খুব সূক্ষ্মভাবে পুলিশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অল্পবিস্তর যাঁরা দায়ী, সেই ব্যক্তিদের সামনে উপস্থাপন করার মধ্য দিয়ে মূলত হত্যাকাণ্ডের যাঁরা পরিকল্পনাকারী, যাঁদের নির্দেশে গুলি চালানো হয়েছে, তাঁদের দায়মুক্তি করার একটা প্রবণতা তাঁরা লক্ষ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতিসংঘের যে তদন্ত রিপোর্ট আছে, সেখানে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে, এটি একটি পরিকল্পিত পুলিশি হত্যাকাণ্ড। এ ছাড়া ২৩ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি বিশেষ দল রংপুরে এসে শুনানির কথা থাকলেও তার আগের দিন অজ্ঞাত কারণে সেই গণশুনানি বাতিল করে তাড়াহুড়ার মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যায়। এই আচরণ তদন্তের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে প্রকাশ করছি, বারবার এই পুলিশি হত্যাকাণ্ডকে প্রশাসনিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে চালিয়ে দেওয়া, পুলিশ কর্মকর্তারা দায়ী রয়েছেন, তাঁদের এখান থেকে খুব সূক্ষ্মভাবে পাশ কাটানোর একটা প্রবণতা লক্ষ করছি।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্ত নিয়ে যেসব বক্তব্য দেন, তাঁর বক্তব্যের অনেকাংশে আমরা অমিল লক্ষ করেছি। তিনি বিভিন্নভাবে ভুল তথ্য দিয়েছেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তির ভুল পরিচয় উল্লেখ করেছেন। এই বিষয়গুলো সামনে এনে আমরা চিফ প্রসিকিউটর ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে জানাতে চাই, আপনারা যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছেন, এই ধোঁয়াশা কাটিয়ে ওঠার জন্য নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন। এটা যে একটি পুলিশি হত্যাকাণ্ড, তা গোটা জাতির কাছে আপনারা স্বীকার করবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম আশিকুর রহমান বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রংপুরে ঘটনাস্থলে এসে হামলার সাক্ষী, যোদ্ধা ও সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে গণশুনানির আয়োজন করে তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। একই সময়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
এর আগে একই দাবিতে আজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।