
রাজশাহীতে মোবাইলে ঋণ নেওয়ার অ্যাপ দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে অর্থ আদায় চক্রের ১৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বোয়ালিয়া মডেল থানা-পুলিশ। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. রফিকুল আলম এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. মাহিউদ্দিন মাহির (৩১), বিন সাদ মিনহাজ (২৩), মো. ছানা মিয়া (৩৫), মো. লিটন (৪৩), মো. মেহেদী হাসান (২৩), মো. হাসান ইমাম (৩৩), মো. বেলায়েত হোসেন (২৮), মো. মারুফ আহমেদ (২৭), সাব্বির হোসেন (২৬), শিহাবুল ইসলাম (২২), ফায়েজুল ইসলাম (২৪), মো. সোহান খান (২১), আবদুল ওয়াদুদ (২৫), ইতি আক্তার (২০), স্মৃতি শাহ সৌমিক (২১), আয়েশা (২১) ও রুবাইয়া (২০)।
পুলিশ জানায়, গত ২৯ মার্চ রাজশাহী নগরের বাসিন্দা আবুল এহসান ফেসবুকে ‘র্যাপিড ক্যাশ’ নামের একটি অ্যাপে ৩০ হাজার টাকা ঋণের লোনের বিজ্ঞাপন দেখেন। তিনি অ্যাপটি ডাউনলোড করে মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও লাইভ ছবি দিয়ে নিবন্ধন করেন। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদের মাধ্যমে তাঁর হিসাবে ৭১৫ টাকা ঢোকে। রাত ১২টার দিকে অ্যাপ চেক করে দেখেন, তাঁর নামে ৭১৫ টাকা জমা হয়েছে। ঋণের শর্তে বলা হয়, ৫৮৫ টাকা সুদসহ মোট ১ হাজার ৩০০ টাকা ৩ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এত সুদ দেখে তিনি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে বন্ধ পেলে ই–মেইলের মাধ্যমে তিনি টাকা পরিশোধ করবেন মর্মে একটি মেইল পাঠান। তখন প্রতারকেরা একটি নম্বর দিয়ে টাকা পরিশোধ করতে বলেন। এরপর তিনি ১ হাজার ৩০০ টাকা পরিশোধ করেন।
ওই দিন আবুল এহসানের নগদ হিসাবে আবার আগের মতো টাকা জমা হয়। আবার ঋণের শর্ত দিয়ে সুদসহ পরিশোধ করতে বলা হয়। এবার সুদসহ পরিশোধ করতে না চাইলে প্রতারকেরা ফোনে জানায়, তার মোবাইলের কন্টাক্ট লিস্ট, ছবি-ভিডিওসহ যাবতীয় তথ্য হ্যাক করেছেন তাঁরা। টাকা পরিশোধ না করলে তাঁর নগ্ন ছবি বানিয়ে সব কন্টাক্ট নম্বরসহ ফেসবুকে ছড়িয়ে দেবে। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করলে প্রতারকেরা তাঁর নগ্ন ছবি বানিয়ে তাঁকেসহ তাঁর নম্বর তালিকায় থাকা কয়েকজনকে পাঠায়। পরে ভয়ে তিনি প্রতারকদের দাবি করা টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু প্রতারক চক্র তাঁর পিছু ছাড়ছিল না। চক্রটি টাকার জন্য তাঁকে ব্ল্যাকমেল করতে থাকে। ১৪ মে তিনি বোয়ালিয়া মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন।
মামলার পর উপকমিশনার (বোয়ালিয়া) মো. সাইফউদ্দীন শাহীনের তত্ত্বাবধানে ওসি মো. সোহরাওয়ার্দী হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল অভিযানে নামে। ১৬ মে বোয়ালিয়া থানা-পুলিশের ওই দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের ৪ নারী সদস্যসহ ১৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১০টি মোবাইল ফোন, ১১টি ল্যাপটপ, ৫টি সিপিইউ, পেনড্রাইভ ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
উপকমিশনার মো. রফিকুল আলম বলেন, চক্রটি অ্যাপের মাধ্যমে ঋণের ফাঁদ পেতে মোবাইল থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে ব্ল্যাকমেল করত। তাদের চাহিদামতো টাকা না দিলে নগ্ন ছবি বানিয়ে ভয়ভীতি দেখাত। ওই চক্রের ১৭ সদস্যকে আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।