
নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী ভর্তি হওয়ায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংকট দেখা দিয়েছে। শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যা হাসপাতাল ও শহরের মণ্ডলপাড়ায় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তৃতীয় তলায় মেডিসিন ও ডেঙ্গু ওয়ার্ডের শয্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি আছেন। শয্যা না পাওয়ায় অনেকে করিডর ও মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শহরের নলুয়াপাড়া এলাকার মুদিদোকানি ইয়াকুব হাওলাদার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার থেকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। শয্যা না পেয়ে হাসপাতালে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ইয়াকুবের স্ত্রী আছিয়া বেগম প্রথম আলোকে জানান, শয্যা না থাকায় মেঝেতে কষ্ট করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার ফতুল্লার গেদ্দার বাজার এলাকার ডেঙ্গু রোগী সেলিম মিয়াও শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি জানান, চার দিন ধরে তাঁর জ্বর, মাথাব্যথা ও বমি হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। গরমের কারণে মেঝেতে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসে আগস্ট মাসের তুলনায় দ্বিগুণ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানান নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স শিবলী আক্তার। তাঁর ভাষ্য, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ডেঙ্গু রোগীরা আসছেন, তবে শহরের রোগীর সংখ্যাই বেশি।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন মুশিউর রহমান প্রথম আলোকে জানান, ডেঙ্গু পরিস্থিতি অন্য সময়ের তুলনায় খারাপ। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে গত আগস্ট মাসে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিলেন ১১৬ জন। সেপ্টেম্বর মাসে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৯ জনে। ৩০০ শয্যা হাসপাতালে আগস্ট মাসে রোগী ভর্তি ছিল ১৬৬ জন। সেপ্টেম্বর মাসে তা বেড়ে হয়েছে ২৭৫ জন। এ ছাড়া অনেক রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের বেসরকারি একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রের (ডায়াগনস্টিক সেন্টার) কর্মকর্তা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি। এমনও দিন গেছে, এক দিনেই প্রায় দেড় হাজার ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হয়েছে। এখনো ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশ খারাপ।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য চারটি ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এরপরও শয্যাসংকটের কারণে অনেককে মেঝেতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
এদিকে ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল বাসার বলেন, চলতি বছর বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে মশার বংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন রোগী ও স্বজনেরা। শহরের বাবুরাইল এলাকার বাসিন্দা নাজমা আক্তার জানান, গত দুই মাসে একবারও মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি। খাল-নালায় পানি জমে মশা জন্মাচ্ছে। এখন বাচ্চারাও আক্রান্ত হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, প্রশাসন শুধু ঘোষণায় সীমাবদ্ধ। বাস্তবে কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। নিয়মিত ওষুধ ছিটালে পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হতো না।
তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে অবহেলার অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত ওষুধ ছিটাচ্ছেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে।’