
প্রতিটি ফুলকপির দাম ৪ টাকা, বাঁধাকপি ৬ থেকে ৮ টাকা। প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৬ টাকায়। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছদাহার শিশুতল এবং চন্দনাইশের দোহাজারীর পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।
সাতকানিয়া উপজেলার শিশুতল বাজারটি অবস্থিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে। ভোর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা এই পাইকারি বাজারে নিজেদের উৎপাদিত সবজি বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। চট্টগ্রাম নগরসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ক্রেতারাও ভিড় করেন বাজারটিতে।
মঙ্গলবার সকালে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাইকাররা দরদাম করে কৃষকদের কাছ থেকে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলাসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি কিনে নিচ্ছেন। কৃষকেরা প্রতিটি এক কেজি ওজনের ফুলকপি কিনে নিচ্ছেন ৪ টাকা করে। তবে দেড় কেজি থেকে দুই কেজি ওজনের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৬ টাকায়। বাজারে প্রতিটি বাঁধাকপি বিক্রি হতে দেখা যায় ৬ থেকে ৮ টাকায়। এসব বাঁধাকপির ওজন দেড় থেকে দুই কেজি করে। বাজারে মুলা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬ থেকে ১০ টাকায়।
বাজারে কথা হয় কৃষক আবদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি দুই টুকরি বাঁধাকপি বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন। এ সময় তাঁর সবজিগুলো দরদাম করে কিনে নেন কেরানীহাটের খুচরা সবজি বিক্রেতা ওসমান গণি। জানতে চাইলে কৃষক আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিটি বাঁধাকপি আট টাকা দরে বিক্রি করেছি।’
খুচরা সবজি বিক্রেতা ওসমান গণি বলেন, ‘বাজারে প্রচুর সবজি। সেই তুলনায় চাহিদা কম। তাই সম্ভবত ফুলকপি-বাঁধাকপি, মুলাসহ সব ধরনের সবজির দাম কমে গেছে। এতে কৃষকেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, আমাদেরও লাভ কমে গেছে।’
শিশুতল বাজার ঘুরে চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারীর পাইকারি বাজারে গিয়েও দেখা যায় ক্রেতা-বিক্রেতায় জমজমাট হয়ে আছে বাজারটি। এই বাজারেও প্রায় একই দামে বিক্রি করতে দেখা যায় ফুলকপি, বাঁধাকপি ও মুলা।
পাইকারেরা জানান, এবার বাজারে একসঙ্গে বিভিন্ন জাতের সবজির সরবরাহ বেশি। তাই ফুলকপি-বাঁধাকপি ও মুলার বাজারে ধস নেমেছে। বিগত কয়েক বছরে এত কম দামে এসব সবজি বিক্রি হয়নি। গত বছরও দাম অনেক চড়া ছিল।
ক্ষতির শঙ্কায় কৃষক
গতকাল বুধবার সরেজমিনে সাতকানিয়ার ছদাহা, সাঙ্গু নদের দুই তীর উত্তর কালিয়াইশ, মাইঙ্গাপাড়া ও দোহাজারীর চর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক স্থানে খেত থেকে মুলা তুলে পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি তোলার সময় পার হতে চললেও তা খেত থেকে তুলছেন না অনেক কৃষক। এতে কিছু এলাকায় খেতেই নষ্ট হতে দেখা যায় এসব শীতকালীন সবজি।
কৃষকেরা জানান, বেশি দামে সার, বীজ, কীটনাশক কিনে তাঁরা ফুলকপি-বাঁধাকপি ও মুলার চাষ করেছেন। মজুরের খরচও পড়েছে অনেক বেশি। অথচ দুই-তিন সপ্তাহ ধরে শীতকালীন এসব সবজির দামে ধস নেমেছে। এখন যে দাম পাওয়া যাচ্ছে তাতে কৃষকের চাষাবাদের খরচও উঠে আসছে না। এমনকি খেত থেকে সবজি তুলে বাজারে নিয়ে যাওয়ার পরিবহন খরচও তুলতে পারছেন না তাঁরা।
দোহাজারীর চর এলাকার কৃষক মাহমুদুল হক এবার প্রায় দুই একর জমিতে শীতকালীন ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করেন। প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা দুই থেকে তিন টাকা দামে কিনে জমিতে রোপণ করেন তিনি। প্রতি একরে জমির ভাড়াসহ চাষাবাদে খরচ পড়েছে লাখ টাকার কাছাকাছি। এখন ওই সব সবজি বিক্রি করে খরচও ওঠে আসছে না। তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে কিছু সবজি বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছি। এখন খেত থেকে ফুলকপি-বাঁধাকপি তুলে বাজারে নেওয়ার পরিবহন খরচও উঠছে না। তাই খেতের সবজি খেতেই নষ্ট হচ্ছে।
উত্তর কালিয়াইশ এলাকার মুলা চাষি মোহাম্মদ মারুফ প্রথম আলোকে বলেন, এবার মুলার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারে মুলার দামে ধস নেমেছে। প্রতি মন মুলা আড়তদারেরা ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা দরে কিনছেন। অথচ খেত থেকে মুলা তুলে ধুয়ে বাজারে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত প্রতি মনে খরচ পড়ে ২৫০ টাকার বেশি। তাই খেত থেকে তুলে বাজারে না নিয়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফুলকপি-বাঁধাকপি, মুলাসহ সব ধরনের সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। শীতকালীন মৌসুমের শুরুতে সব ধরনের সবজির ভালো দামও পেয়েছেন কৃষকেরা। এখন বাজারে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা পড়ে গেছে। এতে স্বাভাবিকভাবে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।