শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কিংবা পারিবারিক দৈন্য, কিছুই দমাতে পারেনি আসিফ আহমেদকে (২৩)। নিজের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে মুমূর্ষু মানুষের প্রাণ বাঁচাতে তিনি কাজ করছেন। নিজে রক্ত তো দিচ্ছেনই, আবার দেশের নানা প্রান্ত থেকে রক্তদাতা সংগ্রহ করে অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ভূমিকা রাখছেন।
ফেসবুকভিত্তিক রক্তদাতা সংগঠন ‘রক্তদানের অপেক্ষায় বাংলাদেশ’-এর একজন মডারেটর আসিফ। প্ল্যাটফর্মটির ফলোয়ার ৩ লাখ ৬০ হাজারের বেশি। এই প্ল্যাটফর্মের হয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ হাজার রোগীর জন্য রক্তের সংস্থান করেছেন তিনি। প্রায় ১৫ হাজার রক্তদাতার তথ্য ও যোগাযোগ সংরক্ষণ করে রেখেছেন নিজের তৈরি গুগল ডেটাবেজে।
আসিফের জন্ম ময়মনসিংহ শহরে। তিন ভাইবোনের পরিবারে তিনি মেজ। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে আগেই। মা আকলিমা বেগম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
আসিফ বলেন, ‘আমি সারা জীবন কাজটি করতে চাই, মানুষের পাশে থাকতে চাই। কিন্তু আমার পরিবার খুব দরিদ্র। জীবনধারণের জন্য একটি কাজের ব্যবস্থা হলে জীবনটাকে টেনেটুনে একটু সহজে কাজটা করা যেত।’
আসিফ জন্ম থেকেই খর্বাকৃতির, সমাজে ‘প্রতিবন্ধী’ হিসেবে পরিচিত। মূলধারার সমাজে জায়গা করে নেওয়া তাঁর জন্য বরাবরই ছিল চ্যালেঞ্জের, তবুও হার মানেননি। দারিদ্র্যকে জয় করে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকে তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন সফলভাবে। কিন্তু তাঁর উচ্চশিক্ষার পথে এখন আর্থিক সংগতি প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর মায়ের একার আয়ে এ ব্যয় চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তাঁর পড়াশোনার গতি থমকে আছে।
দারিদ্র্য ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আসিফকে কষ্ট দেয়, কিন্তু তা কখনোই তাঁর কাজকে থামাতে পারেনি, পারবেও না। আসিফের মুখে সেই সংকল্পের কথা বারবার উচ্চারিত হচ্ছিল। আসিফ বলেন, ‘একসময় নিজেকে নিয়ে অভিমান ছিল। মনে হতো, অন্যদের মতো তো নই। নিজেকে আড়াল করে রাখতাম, কিন্তু একদিন বুঝলাম, আমি তো ইচ্ছা করে এমন হইনি। তাহলে নিজেকে লুকিয়ে রাখার মানে কী? বরং অন্যদের জন্য কিছু করাই যদি হয় জীবনের পরিচয়, তাহলেই বাঁচা সার্থক।’
এই বিশ্বাস থেকেই রক্তদানের প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়া। এখন ফেসবুকে নিয়মিতভাবে সচেতনতামূলক পোস্ট করেন তিনি। নতুন রক্তদাতা খুঁজে বের করে সংগঠনের কর্মসূচিতেও অংশ নেন। আসিফের এমন কাজে গর্বিত তাঁর মা আকলিমা বেগমও। তিনি বলেন, ‘সংসারের অনেক টানাপোড়েন; তবু আমি গর্বিত যে আসিফ মানুষের জন্য দিনরাত কাজ করছে। ওর এ কাজের জন্য মানুষ আমাকে সম্মান করে, ছেলেটার প্রশংসা শুনলে বুকের ভেতরের সব কষ্ট মুছে যায়।’