
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজ সোমবার রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন শেখ হাসিনাকে দ্রুত বাংলাদেশে এনে রায় কার্যকর করার দাবি জানান।
রায়ের বিষয়টি তুলে ধরে রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়ায় নিজ বাড়িতে আবু সাঈদের বাবা বলেন, ‘অন্তরটা ঠান্ডা হইল। আমি খুশি হইছি। ভারত থাকি আনি অতি দ্রুতগতিতে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে বাংলার মাটিতে। তাহলে আমি আরও খুশি হব।’ আর আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বললেন, ‘আমার ছেলে নাই। আমাক খারাপ লাগছে। ফাঁসির রায় যেন কার্যকর হয়।’
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণা করেন। ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ে ছয়টি অংশ রয়েছে। রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির অপরাধ প্রমাণিত। দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একটি অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে একই দণ্ড দেওয়া হয়েছে। অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের খবর শুনে শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারটির পক্ষ থেকে মিষ্টি খাওয়ানো হয়। দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়ে আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময় ফ্যাসিবাদী সিস্টেম কায়েম করে গুম, খুন করেছেন মানুষকে। আয়নাঘরে বন্দী করেছেন। জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে নিরস্ত্র আবু সাঈদকে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ গণহত্যা শুরু হয়। সর্বশেষ শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছেন। তাই তাঁকে দেশে এনে রায় কার্যকরের দাবি করেন তিনি।
এদিকে রায়ের পর আনন্দমিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন শহীদ আবু সাঈদের বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির সদস্যসচিব রহমত আলী বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে আবু সাঈদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর ফাঁসির রায়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর সহযোদ্ধারা খুশি।
রায় ঘোষণার পর সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শওকাত আলীও।