Thank you for trying Sticky AMP!!

পঞ্চগড় সদর উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের চারোখুড়া এলাকায় কৃষক আমিনুর রহমানের কিনোয়া খেত। গত শনিবার দুপুরে তোলা

পঞ্চগড়ে কিনোয়া চাষে সফল আমিনুর 

কিনোয়া দক্ষিণ আমেরিকার একটি ফসল। এই খাদ্যশস্য রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় সহায়তা করে।  প্রতি বিঘায় লক্ষাধিক টাকা লাভ করা সম্ভব।

দুই বছর আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে অবসর নিয়েছেন আমিনুর রহমান। অবসর নিলেও পরিশ্রম করে টাকা আয়ের উপায় খুঁজছিলেন তিনি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন। শেষে কৃষিকাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। ইউটিউব দেখে অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্যশস্য কেনোয়া চাষের পদ্ধতি শিখে ফেলেন। চাষ শুরুর এক বছরের মধ্যেই সফল হন তিনি। স্থানীয় বাজারে চাহিদা না থাকলেও অনলাইনে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন তিনি।

আমিনুর রহমান পঞ্চগড় সদর উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের চারোখুড়া এলাকার বাসিন্দা। এবার এই এলাকায় মোট ১২ বিঘা জমিতে কিনোয়া চাষ করেছেন তিনি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিনোয়া খাদ্য হিসেবে অত্যন্ত প্রাচীন। দানাদার জাতীয় এই শস্যকে বলা হয় সুপারফুড, যার চাহিদা রয়েছে বিশ্বজুড়ে। পায়েসসহ নানাভাবে রান্না করে খাওয়ার উপযোগী ফসলটি ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপকারী খাবার। এটি মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। রান্না করলে এই কিনোয়ার বীজ প্রায় চার গুণ ফুলে ওঠে এবং কিছুটা স্বচ্ছ দানাদার আকৃতি ধারণ করে। মৃদু স্বাদের কিনোয়া একেবারে গলে যায় না এবং কিছুটা চিবিয়ে খেতে হয়।

যেভাবে শুরু

কৃষক আমিনুর রহমান বলেন, ‘চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কী করব, এটা নিয়ে একটা ভাবনা কাজ করত আমার মনে। সাধারণ কৃষিতে অনেক শ্রমিক খাটিয়ে সেখান থেকে আয় করা আমার জন্য কষ্টকর হবে। পরে ইউটিউবে স্বল্পমেয়াদি উচ্চফলনশীল এবং বেশি দামি ফসল খুঁজতে গিয়ে চিয়াসিড আর কিনোয়ার সন্ধান পাই। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে সাত বিঘা জমিতে চিয়াসিড ও এক বিঘা জমিতে কিনোয়ার বীজ বপন করি।  ২০২৩ সালে অক্টোরের শেষ দিকে ১২ বিঘা জমিতে কিনোয়ার চাষ করেছি। আর চিয়াসিড কমিয়ে দুই বিঘা জমিতে চাষ করেছি। চিয়াসিডের স্থানীয় বাজার থাকলেও কিনোয়ার স্থানীয় বাজার এখনো তৈরি হয়নি। এ জন্য পরিচিত একজনের ইউটিউব চ্যানেলে ও ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়ে কিনোয়া বিক্রি শুরু করি।’ 

কিনোয়ার চাষপদ্ধতি

আমিনুর রহমান জানান, অক্টোবর থেকে নভেম্বর কিনোয়ার বীজ বপনের সঠিক সময়। স্বল্পমেয়াদি এই ফসল কম খরচে অধিক লাভজনক। বপনের পর থেকে ঘরে তুলতে মাত্র ৮৫ থেকে ৯০ দিন সময় লাগে। এবার প্রতি বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৮ মণ কিনোয়া উৎপাদন হচ্ছে তাঁর। বর্তমানে তিনি এসব কিনোয়া অনলাইনে বিক্রি করছেন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে।  প্রতি কেজি কিনোয়া যদি সর্বনিম্ন ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয় আর প্রতি বিঘায় যদি সর্বনিম্ন ৬ মণ কিনোয়া উৎপাদিত হয়, তাহলে প্রতি বিঘা থেকে ১ লাখ ৪৪ লাখ টাকার কিনোয়া বিক্রি সম্ভব। আর এসব উৎপাদনে বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয় বলে তিনি জানান; অর্থাৎ প্রতি বিঘায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব।

কিনোয়া সম্পর্কে পুষ্টিবিদ লিনা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, কিনোয়া সব শস্যের মা হিসেবে পরিচিত। এটি প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকায় চাষ শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এর পুষ্টিগুণের কারণে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কিনোয়া প্রোটিন, ফাইবার, থায়ামিন, কপার, ভিটামিন বি৬-এর ভালো উৎস।