মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে আজ বুধবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে আজ বুধবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়

সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনতে সেনাবাহিনী পূর্ণ সহযোগিতা করেছে: চিফ প্রসিকিউটর

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে সেনাবাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন এই আদালতের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

আজ বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ কথা জানান। সেনাবাহিনীসহ এই বিচারপ্রক্রিয়াকে ‘স্মুদলি (সুচারুভাবে)’ পরিচালনার বিষয়ে যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা একটি মামলায় মোট ২৫ জন সাবেক-বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কর্মরত ১৪ জন এবং অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে থাকা ১ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সেদিন সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সেনাবাহিনী সংবিধানস্বীকৃত বাংলাদেশের সব আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। হেফাজতে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১০ দিন পর আজ বুধবার ওই ২৫ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার সেনানিবাসের সাবজেলে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে সেনানিবাসের বাশার রোডসংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এম ই এস বিল্ডিং নম্বর-৫৪’–কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করেছে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আজ যাঁদের উপস্থিত করা হয়েছিল, তাঁদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে, সোপর্দ করার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন কাজ করেছে, তেমনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের রক্ষক হিসেবে যাদের মনে করা হয়, সেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই আদালতের প্রক্রিয়াকে সাহায্য করেছে। তারা ঘোষণা দিয়েছিল, বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি তাদের সব সমর্থন থাকবে। তারা সেই সমর্থন তাঁদের (প্রসিকিউশন) দিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়েছে। এই আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার ব্যাপারে তারা (সেনাবাহিনী) সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছে।

এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন বলে তাজুল ইসলাম জানান।

সেনাবাহিনীকে নিয়ে অপপ্রচার না করার আহ্বান রেখে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, বিচারপ্রক্রিয়াই একটি রাষ্ট্রের সভ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করে। একটি রাষ্ট্র কতটা ‘ফাংশনাল’ আছে, সেটা নির্ধারিত হয় সে রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ কতটা ‘স্মুদলি ফাংশন’ করে। তাই এই বিচারপ্রক্রিয়া পরিচালনায় যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

সেনাবাহিনীকে নিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, তারা (সেনাবাহিনী) যেমন জুলাই-আগস্টে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর পরিচালিত হত্যাযজ্ঞের সময় যেমন রুখে দাঁড়িয়েছিল বা মাঝখানে ভূমিকা পালন করেছিল, যেটা জাতি স্মরণ করে; একইভাবে গুমের বিচারপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও তারা সহযোগিতা করছে, আইনের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা দেখিয়েছে।