Thank you for trying Sticky AMP!!

কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে ঢাকার এডিস মশা

বোতলজাত কীটনাশক প্রয়োগের পর ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত উড়ন্ত ও বিশ্রাম নেওয়া মশা বেঁচে থেকেছে।

এডিস মশা

ঘরে যেসব বোতলজাত মশানাশক ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো ততটা কাজ করছে না। ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা সেসব কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। বোতলজাত কীটনাশক প্রয়োগের পর ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত উড়ন্ত ও বিশ্রাম নেওয়া মশা বেঁচে থেকেছে। রাজধানী ঢাকার মশা নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে। গবেষণায় ছয়টি তরল মশানাশকের কার্যকারিতা দেখা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি বাংলাদেশের এবং একটি করে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার।

Also Read: বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, চাহিদার চেয়ে বাজারে স্যালাইনের সরবরাহ কম

‘ইনসেকটিসাইড রেজিস্ট্যান্স কমপ্রোমাইসেস দ্য কন্ট্রোল অব এডিস এজেপ্টি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা নিবন্ধটি গত মার্চে প্রকাশিত হয় যুক্তরাজ্যের পেস্ট ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স নামের সাময়িকীতে। গবেষণার নেতৃত্ব দেন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের কিউআইএমআর বারগোফার মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং ইউনির্ভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের গবেষক হাসান মোহাম্মদ আল আমিন।

মশাবাহিত রোগের রোগী, মশা এবং মশানাশকের প্রতিরোধী হয়ে ওঠার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা দরকার। প্রয়োজনে যেসব উপাদান দিয়ে এসব মশানাশক তৈরি হচ্ছে, এর পরিবর্তন আনতে হবে। নয়তো এডিস মশা থেকে মানুষের সুরক্ষায় কোনো কাজ হবে না।
আইইডিসিআর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন
হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা চলছে

ডেঙ্গুতে মৃত্যু আগের যেকোনো সময়ের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বিপদের মুখে মানুষ পথ খুঁজছেন মশা নিয়ন্ত্রণের। নানা পদ্ধতির পাশাপাশি মানুষ ঘরে ব্যবহার করা তরল কীটনাশক ব্যবহার করছেন।

এডিস মশার বোতলজাত কীটনাশকের প্রতিরোধী হয়ে ওঠার বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মনে করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, মশাবাহিত রোগের রোগী, মশা এবং মশানাশকের প্রতিরোধী হয়ে ওঠার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা দরকার। প্রয়োজনে যেসব উপাদান দিয়ে এসব মশানাশক তৈরি হচ্ছে, এর পরিবর্তন আনতে হবে। নয়তো এডিস মশা থেকে মানুষের সুরক্ষায় কোনো কাজ হবে না।

পরীক্ষাগারে তিন থেকে পাঁচ দিন বয়সী রক্ত না খাওয়া স্ত্রী মশার ওপর অ্যারোসল স্প্রে করা হয়। ঢাকায় প্রচলিত যেসব কীটনাশক আছে, সেগুলো মূলত পাইরিথ্রয়েড শ্রেণির কীটনাশক দিয়ে তৈরি। মশাগুলোর ওপর সেগুলোই প্রয়োগ করা হয়।

গবেষণা হলো যেভাবে, ফল কী

খিলগাঁও, মিরপুর, উত্তরা, ধানমন্ডি ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা—রাজধানীর এই পাঁচ এলাকা থেকে ২০১৯ সালের জুন মাসে এডিস মশার ডিম সংগ্রহ করা হয়। ডেঙ্গুর সংক্রমণ, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বসতবাড়ির বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে এসব এলাকা নির্ধারণ করা হয়।

Also Read: ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে

পরীক্ষাগারে তিন থেকে পাঁচ দিন বয়সী রক্ত না খাওয়া স্ত্রী মশার ওপর অ্যারোসল স্প্রে করা হয়। ঢাকায় প্রচলিত যেসব কীটনাশক আছে, সেগুলো মূলত পাইরিথ্রয়েড শ্রেণির কীটনাশক দিয়ে তৈরি। মশাগুলোর ওপর সেগুলোই প্রয়োগ করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি মশা উঠতে না পারে, তবে সেগুলোকে মৃত হিসেবে গণ্য করা হয়।

গবেষণাকালে এসব কীটনাশক অস্ট্রেলিয়ার মশার ওপর প্রয়োগ করে দেখা যায়, ৩০ মিনিটের মধ্যে এগুলোর শতভাগ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে প্রতিটি মারাও যায়।

গবেষণার ক্ষেত্রে উড়ন্ত ও বিশ্রামরত মশা উভয়কেই নেওয়া হয়। এর পাশাপাশি মশার জন্য যে আদর্শ তাপমাত্রা বা পরিবেশ থাকে, গবেষণাগারে তা বজায় রাখা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড হলো, স্বাভাবিক মাত্রায় প্রয়োগের পর ৯০ শতাংশ মশা যদি নিস্তেজ না হয়ে যায়, তবে সেই মশা কীটনাশক প্রতিরোধী হয়েছে বলা যাবে।

Also Read: শিশুদের ডেঙ্গু ব্লকে শয্যার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ রোগী

গবেষণাকালে এসব কীটনাশক অস্ট্রেলিয়ার মশার ওপর প্রয়োগ করে দেখা যায়, ৩০ মিনিটের মধ্যে এগুলোর শতভাগ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে প্রতিটি মারাও যায়। অপর দিকে ঢাকার এডিসের ডিম থেকে উৎপন্ন মশায় বোতলজাত মশানাশক প্রয়োগের পর ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত উড়ন্ত ও বিশ্রাম নেওয়া মশা বেঁচে থেকেছে বলে দেখা যায়।

বোতলজাত কীটনাশকের এই ক্ষণস্থায়ী প্রভাব আসলে মশা মারতে তেমন কাজ দেয় না। কারণ, এই মশাগুলো ২৪ ঘণ্টা পর যখন কোনো মানুষকে কামড়াবে, তখন সেগুলো ডেঙ্গু ভাইরাসও ছড়াতে পারে।
গবেষক হাসান মোহাম্মদ আল আমিন

প্রভাব কী

গবেষক হাসান মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, বোতলজাত কীটনাশকের এই ক্ষণস্থায়ী প্রভাব আসলে মশা মারতে তেমন কাজ দেয় না। কারণ, এই মশাগুলো ২৪ ঘণ্টা পর যখন কোনো মানুষকে কামড়াবে, তখন সেগুলো ডেঙ্গু ভাইরাসও ছড়াতে পারে।

গবেষণা হয়েছে ঢাকার মশার ওপর মশানাশকের কার্যকারিতা নিয়ে। ঢাকার বাইরের চিত্র এটি নয়। তাই আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, এমন হতে পারে যে অন্য এলাকার মশানাশকগুলো মশা প্রতিরোধী হয়ে ওঠেনি। তারপরও এ গবেষণা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা ঘরে ব্যবহার করা মশানাশক বা কীটনাশকসহ কীটনাশক-জাতীয় নানা পণ্যের অনুমোদন দেয়। এর আগে সেগুলোর কার্যকারিতা দেখার জন্য আইইডিসিআরের কাছে পাঠানো হয়।

আমরা মশানাশকের অনুমোদন দিই বটে, কিন্তু এর কার্যকারিতা দেখার জন্য আইইডিসিআরকে পাঠাই। এসব প্রতিরোধী হয়ে উঠছে কি না, সেটা অবশ্য আমরা দেখি না।
উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখার পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদুল হাসান

আইইডিসিআরের মহাপরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা থেকে আমাদের কাছে যেসব পণ্য পাঠানো হয়, সেগুলোর কার্যকারিতা আমরা দেখি। এগুলো মশা প্রতিরোধী হয়ে উঠছে কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। অন্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব নমুনা (স্যাম্পল) আমাদের দেয়, বাজারে ঠিকমতো সেগুলো সরবরাহ করা হয় কি না, সেগুলো আসলে দেখভাল করা হয় না। তাই এসব প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে।’ তাহমিনা শিরিন অবশ্য বলেন যে যদি কীটনাশকের মাধ্যমে মশা ৯০ শতাংশ নিস্তেজ না হয়ে পড়ে, তাহলে সেগুলো কার্যকর হিসেবে গ্রহণ করা হয় না।

অপর দিকে উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখার পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মশানাশকের অনুমোদন দিই বটে, কিন্তু এর কার্যকারিতা দেখার জন্য আইইডিসিআরকে পাঠাই। এসব প্রতিরোধী হয়ে উঠছে কি না, সেটা অবশ্য আমরা দেখি না।’