
প্রায় এক দশক আগে প্রথম নীলচিতা ফুল দেখি গাজীপুরের হাতিয়াবোয় ‘আরণ্যক’ বাগানবাড়িতে। বেশ বড়সড় একটি ঝাড়ে অসংখ্য ফুলের প্রাচুর্য আমাদের মুগ্ধ করেছিল। তারপর আরও অনেক বাগানে এ ফুল দেখেছি। দীর্ঘস্থায়ী প্রস্ফুটনের জন্য ফুলটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
নীলচিতার মুগ্ধতা না কাটতেই কয়েক বছর পর দেখা হলো লালচিতা বা রক্তচিতা ফুলের সঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বাগানেও প্রথম দেখি রক্তচিতা ফুল। এর আগে কখনো রক্তচিতা ফুল দেখিনি। সৌন্দর্যের বিচারে রক্তচিতাও কম যায় না। তবে তুলনামূলকভাবে নীলচিতার চেয়ে রক্তচিতা অনেকটাই দুর্লভ।
অপ্রচলিত ধরনের উদ্ভিদ রক্তচিতা ভেষজগুণে অনন্য। এই গাছের মূল ও পাতা টিউমার, দাঁতব্যথা, গ্যাস্ট্রিক, যকৃৎ সমস্যা ও গর্ভনিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। শরীরের কোনো স্থানে টিউমার হলে পাতা বেটে ওপরে লাগাতে হয়। দাঁতে ব্যথা হলে শিকড় চিবিয়ে মুখের ভেতর কিছুক্ষণ রাখলে উপশম হয়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় গাছের পাতা চূর্ণ করে বড়ি বানিয়ে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভরা পেটে সকাল-বিকেল একটি করে বড়ি খেতে হয়। যকৃৎ বেড়ে গেলে এক চা-চামচ পরিমাণ শিকড়ের রস প্রতিদিন তিনবার করে সাত দিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
রক্তচিতার মূলীয় অংশে আছে কয়েক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। যেমন প্লাবাজিন, সিটোস্টেরল, গ্লাইকোসাইডস। থাই ও চীনা ভেষজ চিকিৎসকদের মতে, এ গাছের প্রধান ভেষজ গুণ হচ্ছে প্লাবাজিন, যা পাইলস রোগে উপকারী। কারণ, এই রাসায়নিক মল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। ভারতীয় বনৌষধি শাস্ত্রের সমীক্ষায়ও এই প্রজাতির ব্যবহার দেখা যায়। বিশেষ করে হেপাটাইটিস, ডিসপেপসিয়া ও বাতরোগে। চর্মরোগেও এর ব্যবহার দেখা যায়। তবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলেছেন ভেষজ চিকিৎসকেরা।
রক্তচিতার বৈজ্ঞানিক নাম Plumbago indica। পরিবারের নাম প্লাম্বাগিনেসিয়াস। আমাদের দেশের পাহাড়ি এলাকায় রক্তচিতার বেশ কয়েকটি ঘনিষ্ঠ প্রজাতি দেখা যায়। এটি বহুবর্ষজীবী ছোট গুল্ম বা ক্ষুদ্র আকারের আরোহী, সাধারণত পাঁচ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গাছের গা আঠালো, পাতা সরল ও একান্তর। পাতার আকার মোটামুটি ডিম্বাকৃতি। পুষ্পবিন্যাস গাছের আগায়, কখনো কখনো কিনারায়ও ফোটে। বৃতি কিছুটা আঠালো ধরনের। ফুলে লালচে রঙের পাঁচটি পাপড়ি থাকে। ফল ক্যাপসুলের মতো। বলধা গার্ডেন ও বোটানিক্যাল গার্ডেনেও এ ফুল দেখা যায়। ফুল ও ফলের মৌসুম সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। কাটিং করে চারা করা সুবিধাজনক।