সুগন্ধি

আষাঢ়ী লতা

আষাঢ়ী লতার ফুল, তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীতীরের একটি মঠের দেয়াল থেকে তোলা l ছবি: লেখক
আষাঢ়ী লতার ফুল, তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীতীরের একটি মঠের দেয়াল থেকে তোলা l ছবি: লেখক

ছেলেবেলার স্মৃতি, পুরোটা মনে নেই। সম্ভবত গ্রামের কোনো একটি পথের ধারের ঝোপে একটি লতা দেখেছিলাম। বড় একটি গাছ জড়িয়ে বেড়ে উঠেছিল সেটি। লতাটির কিছু শাখা নিচের দিকে ঝুলে পড়া। কাঁটাযুক্ত লতায় হালকা গোলাপি-সাদা মিশেল রঙের ফুল। দেখতে সেমাইয়ের মতো, কিন্তু খুব নরম। খুবই সুগন্ধি ফুল। বহু বছর কেটে গেছে। সেই লতার দেখা আর কোথাও পাইনি। যখন যেখানে গেছি, এ লতার খোঁজ করেছি। বাংলাদেশের ৫৬টি জেলার নানা প্রান্তে ঘোরাঘুরি করে আরও দুটি জেলায় দুটি লতার সন্ধান পেয়েছিলাম। একটি যশোরের কেশবপুরের একটি মন্দিরের কাছে, অন্যটি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা নদীর ধারে একটি পুরোনো মঠের কাছে। সম্ভবত ধর্মীয় কোনো নিয়মনীতির কারণে লতা দুটি কাটা পড়েনি। হয়তো আরও কোথাও আছে, তবে আমার চোখের আড়ালেই রয়ে গেছে। ঝোপঝাড় বিনাশের ফলে সুন্দর ফুলের এ লতা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সবশেষে ২০১৪ সালে বরিশালের কাশিপুরের গ্রামের এক বাড়ির ঝোপের কাছে একটি লতা পেয়েছিলাম।
বাংলা নাম আষাঢ়ী লতা হলেও আষাঢ় মাসের সঙ্গে এটির কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানা নেই। কেউ এটিকে কালকেরা, বাগানয়ী নামে জানেন। শীতের শেষ দিকে এ লতায় ফুল আসা শুরু করে। মৌমাছি, ভ্রমর দিনের বেলায় সারাক্ষণ গুনগুন করে ফুলে ফুলে। বসন্ত ও গ্রীষ্মজুড়ে থাকে ফুল। এটি দেশীয় লতা। আমাদের গ্রামীণ ঝোপঝাড়ের কাছে বেড়ে ওঠা লতা। তবে বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, চীনেও এ লতা জন্মে। মধুপুর এলাকায় এটি আছে বলে তথ্য পেয়েছি। তা ছাড়া ঢাকা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও চট্টগ্রাম এলাকায় আষাঢ়ী লতা পাওয়া যায় বলে শুনেছি।
উদ্ভিদ বহু শাখাযুক্ত ঝোপময়, ২ থেকে ৮ মিটার লম্বা হয়। কাণ্ডে বাঁকানো কাঁটা থাকে, যা ধারকে আটকে রাখতে সাহায্য করে। কাণ্ড ধূসর। পাতা ২ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। ফুল হালকা গোলাপি থেকে হালকা বেগুনি রঙের। ক্রমান্বয়ে সাদা হয়ে যায়। বৃতি ৯ মিলিমিটার। পাকা ফল খাওয়ার উপযোগী। কচি ফল তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। ইংরেজি নাম Indian Caper, Ceylon Caper। বৈজ্ঞানিক নাম Capparis zeylanica।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ লতা। বীজে বংশবৃদ্ধি। সমাজ ও সভ্যতার উন্নয়নের তোড়ে পৃথিবীময় লতা, গুল্ম, পশুপাখির প্রজাতির বিলুপ্তির হার বেড়ে গেছে। এসব সংরক্ষণ না করলে মানুষের ভবিষ্যৎ কঠিন হয়ে পড়বে।