প্রকৃতি

গ্রীষ্মের বনফুল বরুণ

বরুণ ফুল, ভোলা থেকে তোলা। ছবি: লেখক
বরুণ ফুল, ভোলা থেকে তোলা।  ছবি: লেখক

গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে গ্রামবাংলায় যে বনফুলটি বেশি চোখে পড়ে, সেটি হলো বরুণ। গাছভরা অফুরন্ত প্রস্ফুটন প্রকৃতিকে এক অনাবিল উচ্ছ্বাস দেয়। বাংলাদেশের জলাভূমি, নিচু এলাকা, নদীর তীর ও হাওর এলাকায় সহজদৃষ্ট বরুণ। বসন্তে পাতা ঝরে গেলে গ্রীষ্মের শুরুতে নতুন পাতার সঙ্গে বড় বড় থোকায় ফুলের আগমন হয়। সাদা ও হালকা হলুদ বর্ণের ফুলের পসরা মাসখানেক ধরে থাকে। বর্ষাকালে দেখা যায় কদবেলের মতো ছোট ছোট ফল। শোভাবর্ধনকারী তরু হিসেবে বরুণ যথেষ্ট দাবিদার হলেও আমাদের পরিকল্পনায় বরুণের স্থান নেই! হাতিরঝিলে একটি বরুণ ছিল, নগরায়ণের তোপে সেটি কাটা পড়েছিল। ভেবেছিলাম, হাতিরঝিলে সড়কের পাশে বরুণ নতুন করে রোপণ করা হবে। কিন্তু বিদেশি তরুর প্রতি আমাদের ঝোঁক বেশি। মেহগনি ও লম্বু গাছ লাগিয়ে হাতিরঝিল নষ্ট করা হয়েছে। বৃক্ষায়নে কোনো নান্দনিকতার আঁচ নেই। সর্বত্রই অপরিকল্পনার ছাপ। বসুন্ধরা এলাকার ৩০০ ফুট সড়কেও বৃক্ষায়নে কোনো পরিকল্পনার ছাপ চোখে পড়েনি।

বরুণ ছোট থেকে মাঝারি আকারের বৃক্ষ। বাকল ধূসর-বাদামি ও মসৃণ। সাধারণত গাছ ১০-২০ মিটার উঁচু হয়। হাওর এলাকার কোনো কোনো জনপদে অনেক বড় ও বয়সী বরুণ গাছ দেখা যায়। ঢাকার চারপাশের জেলায় বিশেষ করে মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জে বরুণের প্রাধান্য বেশি। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় কম-বেশি দেখা যায়। তবে উত্তরবঙ্গে অপেক্ষাকৃত কম। ফুলের পাপড়ি ৪টি মুক্ত, পুংকেশর ২০-২৫ টি, প্রায় ৪ সেন্টিমিটার লম্বা, বেগুনি। ফল গোলাকার বা ডিম্বাকার, শক্ত শাঁসাল। বীজ ও শিকড় থেকে চারা হয়। বরুণের বৈজ্ঞানিক নাম crateva nurvala, পরিবার Capparaceae। ইংরেজি নাম Three leaved Caper। কোথাও কোথাও বরুণ বৈন্যা গাছ নামে পরিচিত।

প্রাচীনকাল থেকেই বরুণ ভেষজ গাছ হিসেবে পরিচিত। পাতা চর্মরোগ, ব্যথা, বাত নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। শিকড়ের বাকলের নির্যাস গ্যাস্ট্রিক রোগে ব্যবহার করা হয়। কাঁচা ফল রান্না করে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। বরুণের আদি আবাস ভারত, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া।