পরিযায়ী হাঁস

চখাচখি

পানিতে দাঁড়ানো এক জোড়া চখাচখি। ছবিটি রাজশাহীর পদ্মা নদী চর থেকে তোলা l লেখক
পানিতে দাঁড়ানো এক জোড়া চখাচখি। ছবিটি রাজশাহীর পদ্মা নদী চর থেকে তোলা l লেখক

রাজেশ্বরীর খোঁজে অপেক্ষায় ছিলাম অনেক দিন। শেষমেশ খবর পেলাম রাজশাহীর পদ্মার চরে বিভিন্ন হাঁসের সঙ্গে একটি রাজেশ্বরীর দেখা মিলেছে। এ কথা শুনে রাজশাহী গেলাম। কিন্তু দুদিন খোঁজাখুঁজি করেও হদিস পেলাম না। তবে রাজেশ্বরীর দেখা না পেলেও পেয়ে গেলাম ওর এক জাতভাইয়ের। জানুয়ারি ও মার্চ দুবারের সফরে প্রতিদিনই ২ থেকে ৪০-৫০টির দলে পদ্মার বিভিন্ন এলাকায় ওদের দেখেছি। দৈহিক সৌন্দর্যে কোনো অংশেই সে রাজেশ্বরীর চেয়ে কম নয়।
রাজেশ্বরীর এই জাতভাই হলো এ দেশের আরেক পরিযায়ী হাঁস চখাচখি (Ruddy Shelduck or Brahminy Duck)। চখাচখি বা মানিকজোড় হাঁস নামেও পরিচিত। Anatidae গোত্রের এই হাঁসটির বৈজ্ঞানিক নাম Tedorna ferruginea।
চখাচখি দেহের রঙে-ঢঙে অন্যান্য পরিযায়ী হাঁসের চেয়ে বেশ আলাদা। হাঁসা ও হাঁসি দেখতে প্রায় একই রকম। হাঁসা আকারে কিছুটা বড়। হাঁসার দেহ মরচে-কমলা, মুখমণ্ডল সাদা, মাথা ও ঘাড় হলদে-বাদামি। ডানার উজ্জ্বল সবুজ পতাকা ওড়ার সময় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রজনন ঋতুতে গলায় কালো মালা দেখা যায়। হাঁসির মুখণ্ডল বেশি সাদা, মাথা ফিকে ও গলায় মালা হয় না। উভয়েরই চোখ বাদামি; ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁস দেখতে হাঁসির মতোই, কিন্তু দেহের রং আরও ফ্যাকাশে, পিঠ বাদামি, ডানার গোড়ার পালক ও ডানা-ঢাকনি ধূসর।
চখাচখি সচরাচর দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি। তবে এ বছর এদের তেমন বেশি সংখ্যায় দেখা যায়নি। এরা এ দেশের বিভিন্ন নদী ও জলাশয়ে আসে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট দলে বিচরণ করে। নরম কাদামাটি ও স্বল্প পানিতে খাবার খোঁজে। জলজ আগাছা, উদ্ভিদ, মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড়, শামুক, কাঁকড়া ইত্যাদি খায়। ওড়ার সময় ‘আআখ-আআখ-’ বা ‘চূর-চূর-চূর-চূর’ শব্দ করে।
মে-জুন এদের প্রজননকাল। এ সময় এদের মূল আবাসভূমি দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়া, মঙ্গোলিয়া, তিব্বত প্রভৃতি জায়গার উঁচু মালভূমির মধ্যে অবস্থিত জলাশয়ের বালু বা কাদাময় পাড়ে গর্ত করে তাতে বুকের ঝরে পড়া পালক বিছিয়ে বাসা বানায়।
হাঁসি ৮-৯টি ধবধবে সাদা ডিম পাড়ে। হাঁসা বাসা পাহারা দেয় ও হাঁসি একাই ডিমে তা দেয়। ডিম ফোটে ২৮-২৯ দিনে। প্রায় ৫৫ দিনে বাচ্চারা উড়তে শেখে। এরা প্রতিবছর আমাদের দেশে আসে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে। কিন্তু কিছু মাংসলোভী শিকারির হাতে প্রতিবছরই কিছু না কিছু মারা পড়ে।