Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে গাজীপুরের বায়ুদূষণ

প্রথম আলো ফাইল ছবি।
>
  • গাজীপুর শহরের দিকে এগোলে ধুলার ঘনত্ব বাড়তে থাকছে
  • ফেব্রুয়ারির বেশির ভাগ দিন এখানকার বায়ু ছিল অস্বাস্থ্যকর
  • মার্চে বেশির ভাগ দিন বায়ুর মান ছিল সতর্কতামূলক পর্যায়ে

রাজধানীর উত্তরা পেরিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীতে প্রবেশ করলেই ধুলাবালিতে অনেকেরই দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যাবে। গাজীপুর শহরের দিকে যতই এগোনো যাবে, ধুলার ঘনত্ব ততই বাড়তে থাকবে। ধুলামাখা সড়ক পেরিয়ে শহরে পৌঁছানো গেলেও এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না।

অথচ গত জুনে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের অন্যতম স্লোগান ছিল গাজীপুর শহরকে দূষণমুক্ত করা। সেখানে আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের স্লোগান ছিল, ‘গাজীপুর হবে সবুজ ও নির্মল শহর।’ কিন্তু এই ১০ মাসে শহরের বায়ু নির্মল হওয়ার বদলে আরও দূষিত হয়েছে। সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, গাজীপুরের বায়ুদূষণ এখন রাজধানী ঢাকাকেও পাল্লা দিচ্ছে। গত এক বছরের বড় সময় ধরে ঢাকার চেয়েও দূষিত ছিল এই শহরের বায়ু।

পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, বায়ুর গুণগত মানমাত্রা অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে গাজীপুরে স্বাভাবিক বায়ু ছিল না বললেই চলে। ফেব্রুয়ারির বেশির ভাগ দিন এখানকার বায়ু ছিল অস্বাস্থ্যকর। আর গত মার্চে বেশির ভাগ দিন বায়ুর মান ছিল সতর্কতামূলক পর্যায়ে। রাজধানী ঢাকার মতো গাজীপুর শহরের বাতাসেও ক্ষুদ্র বস্তুকণিকার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫ ও পিএম ১০) পরিমাণ মানমাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন হওয়ার পর গত ছয় বছরে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। মাঝেমধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় পানি ছিটানোর মাধ্যমেই তারা দায়িত্ব শেষ করে। মূলত শুষ্ক মৌসুম অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চ—এই সময়ে দূষণ বেশি হয়ে থাকে। ইটভাটা, সড়কের ধুলা-মাটি, কলকারখানা, যানবাহনের ধোঁয়া ইত্যাদি দূষণের মূল কারণ। বায়ুদূষণের ফলে শ্বাসনালির সমস্যা, ফুসফুসে সমস্যা, অ্যাজমার ঝুঁকি বাড়ে।

জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সবেমাত্র কাজ শুরু করেছেন। গাজীপুরকে গ্রিন ও ক্লিন সিটিতে রূপান্তর করতে হলে অনেক সময়ের দরকার। আগে যে কাজগুলো কেউ করেননি, এখন তিনি সেগুলো করছেন। সবাই নানাভাবে দূষণ করছে। কেউ কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলছে, কেউ ময়লা–আবর্জনা ড্রেনে ফেলছে। ধুলাবালু ওড়াচ্ছে। তিনি বলেন, শহর এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পানি ছিটানো হয়। পর্যায়ক্রমে সব ওয়ার্ডে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর শহরের প্রধান সড়কের ৩৩ কিলোমিটারজুড়ে ও শহরের ভেতরের বেশির ভাগ সড়কে নির্মাণকাজ চলছে। এসব নির্মাণকাজের ইট–সুরকি ও বালু সড়কের পাশেই ফেলে রাখা হচ্ছে। ফলে সেখান থেকে উড়ছে বিপুল পরিমাণ ধুলা। আবার শুষ্ক মৌসুমে কিছুটা উঁচু ওই এলাকায় এমনিতেই ধুলা বেশি থাকে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শহরের বিভিন্ন স্থানে বৈধ ও অবৈধ ইটভাটা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, গাজীপুরে বায়ুদূষণের মূল কারণ ইটভাটা এবং সড়ক নির্মাণের চলমান কাজ। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠানও এর জন্য দায়ী। গাজীপুর জেলায় ইটভাটা আছে ২৯০টি। নিয়ম অনুযায়ী সিটি করপোরেশন এলাকায় ইটভাটা থাকার কথা নয়। সিটির ভেতরে আগে ৮৫টি ইটভাটা ছিল। ২২টি বন্ধ করা হয়েছে। কয়েকটি নিজেরা বন্ধ করেছে। উচ্চ আলাদতে রিট করে ৫৫টি ইটভাটা চালু আছে। এসব ইটভাটার বেশির ভাগ কড্ডা, বাইমাল ও নাওজোর এলাকায়। কড্ডা এলাকায় মূল সড়কে দাঁড়ালে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ইটভাটা এবং আকাশে কালো ধোঁয়া চোখে পড়ে।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুস সালাম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সারা বছর সড়কের কাজ হচ্ছে, এতে ধুলাবালু উড়ছে। অনেকগুলো ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে না। ফলে সব সময় বায়ুদূষণ হয়ে আসছে।

আবদুস সালাম বলেন, গত মাসে তাঁরা ইটভাটাগুলোতে ৪৭টি অভিযান চালিয়ে ৬৫ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। এ ছাড়া সদর দপ্তরের সহযোগিতায় পরিবেশদূষণের দায়ে ৫৬টি ইটভাটার কাছ থেকে ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন।

তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সময় সময় ইটভাটাগুলোকে জরিমানা করা হলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না।