Thank you for trying Sticky AMP!!

দেশে বায়ুদূষণে বছরে ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু: বিশেষজ্ঞ মত

ধুলায় আচ্ছন্ন চারদিক। এতে দুর্ভোগ যেমন বাড়ছে, তেমনি রোগব্যাধিও। এর মধ্য দিয়েই চলছে প্রতিদিনকার জীবন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার এলাকায়

জলবায়ুর পরিবর্তন অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে বায়ুদূষণে বিশ্বে প্রতিবছর ৭০ লাখ অপরিণত নবজাতকের মৃত্যু হয় ও প্রতি মিনিটে মারা যান ১৩ জন। বাংলাদেশে বছরে বায়ুদূষণে প্রতি ১ লাখে ১৪৯ জন (মোট মৃত্যু ২ লাখ ৪০ হাজার) মারা যান।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা এসব তথ্য জানান।

বর্ধন জং রানা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অপুষ্টি, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ও হিট স্ট্রেসে ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্বে বছরে অতিরিক্ত আড়াই লাখ মানুষ মারা যাবে।

বর্ধন জং রানা আরও বলেন, ‘তামাকের ব্যবহারে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৯৬১ মানুষ মারা যান, পরোক্ষ ধূমপানে মারা যান ২৪ হাজার ৭৫৭ জন। এখানে প্রক্রিয়াজাত খাবার ও কোমল পানীয়ের ব্যবহার প্রচুর পরিমাণে বাড়ছে। দ্রুত বর্ধমান এই সংকট প্রতিরোধ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই সংকট করোনার চেয়েও বড় ও স্থায়ী বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আমাদের স্বাস্থ্য ও বিশ্বকে রক্ষায় জলবায়ু কর্মপন্থা গ্রহণ করে সরকার, নাগরিক সমাজ, শিল্পকারখানা এবং অংশীজনদের একসঙ্গে কাজ করার সময় এসেছে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর স্বাস্থ্য ভালো রাখছি না। আবহাওয়া, বাতাস, পানি, মাটি নষ্ট হচ্ছে। জীবন নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। বাংলাদেশে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ বেড়েছে। যেসব রোগ আগে এখানে ছিল না।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা শহরে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, বায়ুদূষণ অনেক বেশি। ফলে মানুষের অনেক রকমের অসুখ-বিসুখ হচ্ছে। নগরায়ণ এত হচ্ছে যে গাছ থাকছে না। বাংলাদেশ নিজে এত দূষণ করে না। বড় বড় দেশ আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ভারত—এরাই সবচেয়ে পরিবেশ দূষণ করে থাকে।’

Also Read: ঢাকার বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি হয় মধ্যরাতে

জাহিদ মালেক বলেন, ‘পৃথিবীর স্বাস্থ্য ভালো রাখা আমাদের দায়িত্ব। ঢাকা শহরে দেড় কোটি লোক বসবাস করে। তাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যহানিকর পরিবেশে থাকতে হয়। গাড়ির আওয়াজ হচ্ছে। ভবন নির্মাণে শব্দ হচ্ছে। ঢাকার আশপাশে শত শত ব্রিকফিল্ড। ধূলিকণাগুলো বাতাসে উড়ছে। খাদ্যে অনেক সময় ভেজাল করা হয়।’ এ কারণেও নানা অসুখ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংক্রামক রোগ বাড়ছে। অসংক্রামক রোগ যেমন ক্যানসার, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস বাড়ছে। সবকিছুর একটা বিরাট কারণ, পরিবেশ। আমাদের ব্যবস্থাপনাও ভালো রাখতে হবে। পরিবেশদূষণের কারণে স্ট্রেস বাড়ছে। আমরা মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হচ্ছি।’

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ।

প্রবন্ধে বলা হয়, ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী করোনা ব্যবস্থাপনায় সারা বিশ্বে আমাদের স্কোর ৬৪ দশমিক ৬ ও অবস্থান ২৯তম। অথচ ভারতের অবস্থান ৩৭তম ও পাকিস্তানের ৫১তম। গড় আয়ুতে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে। দেশে নবজাতক, শিশু, মাতৃমৃত্যুর হার অনেকটা কমেছে। কিশোরী মাতার মৃত্যুহারও কমেছে। আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে প্রবন্ধে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন শাহাদাৎ হোসেন মাহমুদ। বলেন, স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ করা দরকার। এ ছাড়া পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় লিঙ্গবৈষম্য রয়েছে। যেকোনো হাসপাতালে পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক বুথ থাকলেও ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য কোনো বুথ নেই। তাঁদের জন্য একটি ব্যবস্থা থাকা উচিত।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইকবাল আর্সলান।