
নদ-নদী বাঁচাতে ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় গতকাল শুক্রবার নওগাঁয় ছোট যমুনায় নৌসমাবেশ হয়েছে। বিশ্ব নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নওগাঁ শাখা এ আয়োজন করে।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে শহরে ধোপাপাড়া পারঘাঁটি এলাকায় ছোট যমুনা নদীতে ঘণ্টাব্যাপী এ সমাবেশ হয়। নদীকৃত্য দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘নদী এবং নারী’।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন একুশে পরিষদ নওগাঁর সহসভাপতি মুকুল চন্দ্র কবিরাজ। বক্তব্য দেন সংগঠনটির উপদেষ্টা ময়নুল হক দুলদুল, শরিফুল ইসলাম খান, সজল কুমার চৌধুরী ও বিন আলী পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক মেহমুদ মোস্তফা এবং বাপা জেলা কমিটির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
ময়নুল হক দুলদুল বলেন, নদীগর্ভেই বাংলাদেশের জন্ম। তাই নদী বাঁচাতে সরকারের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নদীপাড়ের মানুষকে সচেতন হতে হবে। বাসাবাড়ি ও কলকারখানার ময়লা-আবর্জনা নদীতে না ফেলে নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে।
শরিফুল ইসলাম খান বলেন, নওগাঁর ছোট যমুনা, তুলসীগঙ্গা নদীসহ অসংখ্য নদ-নদী ভয়াবহ দূষণের শিকার হয়েছে। এতে নদ-নদীগুলো ক্রমে ভরাট হয়ে স্বাভাবিক নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া নদীগুলোর দুই তীর দখল হয়ে সেগুলো ধীরে ধীরে সর্পিলাকার ধারণ করছে। নদ-নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে। এগুলোকে অবিলম্বে পুনঃখনন করতে হবে। নদী দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এ ছাড়া নদী দূষণ রোধ করতে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মেহমুদ মোস্তফা বলেন, ‘এবারের বিশ্ব নদীকৃত্য দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে নদী এবং নারী। একজন মা যেমন তাঁর সন্তানকে পরিচর্চা করেন এবং খাবার খাইয়ে বড় করে তোলেন, নদীও প্রত্যক্ষভাবে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। নদীগুলো আমাদের ধারণ করে আছে মায়ের মতো। এই মা ভালো না থাকলে আমরা কেউই ভালো থাকব না। তাই নদী বাঁচাতে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।’
অন্য বক্তারা বলেন, দেশের নদ-নদী, জলাভূমি দখল ও দূষণ প্রতিরোধে কঠোর আইন করা, নৌপথকে সচল রাখতে নদীগুলোকে খনন করা, নদী ও জলাভূমির দূষণ রোধে সব কারখানায় শিল্পবর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণে সরকারকে অবিলম্বে উদ্যোগ নিতে হবে।
সম্প্রতি ভয়াবহভাবে পানিদূষণের কারণে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীতে মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে ওঠে। নওগাঁর বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এ জন্য জয়পুরহাটের চিনিকল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে আসছে। জয়পুরহাটের চিনিকলের বর্জ্য ছোট যমুনার পানিতে মেশায় নদীর ব্যাপক হারে দূষিত হয়ে পড়ছে। এ জন্য সংগঠনগুলো মানববন্ধন ও সমাবেশ করে চিনিকলের বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে।