Thank you for trying Sticky AMP!!

বনে দেখা কুশমিকা

বান্দরবানের নীলগিরি যাওয়ার পথে ফুটেছে কুশমিকা। সম্প্রতি ছবিটি তুলেছেন যায়েদ আমীন।

প্রায় ১৫ বছর আগে ফুলটি প্রথম দেখি রমনা পার্কে। বৃক্ষপ্রেমী জিয়াউল হাসান গাছটি চিনিয়েছিলেন। নাম বলেছিলেন লেডিস আমব্রেলা। আগে কতবার যে এ গাছের আশপাশ দিয়ে হেঁটেছি, হিসাব নেই। তখন ভেবেছি বাগানবিলাসের ঝাড়। ফুল ও পাতাগুলো দূর থেকে দেখতে অনেকটা সে রকমই। এ কারণে আগ্রহ নিয়ে দেখা হয়নি কখনো। ভালোভাবে খেয়াল করলেই বোঝা যাবে কমলা রঙের ফুলগুলোর গড়ন অনেকটা ছাতার মতোই। মাঝখানে বেশ জুতসই একটা ডাঁটিও আছে। ফুলগুলো নিখুঁত বিন্যাসে ফুটে আছে গাছজুড়ে। নামটি ইংরেজি হওয়ায় ভেবেছিলাম আমাদের দেশি নয়। পরে বই পড়ে জানতে পারি গাছটি মোটেও ভিনদেশি নয়, আমাদের দেশি, নাম কুশমিকা। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ গ্রন্থের তথ্যমতে এ গাছ ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। কিন্তু বৃহত্তর সিলেটের বনবাদাড়ে কখনো চোখে পড়েনি।

গাছটির কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক আবাসেই দুবার গাছটির দেখা পাওয়া গেল। উদ্ভিদপ্রেমী ও পর্যবেক্ষক যায়েদ আমীন সেখানে ফুলটি প্রথম দেখেন। ২০২০ সালে সেপ্টেম্বরের দিকে রাঙামাটি থেকে কাপ্তাই যাওয়ার পথে আসামবস্তি লাগোয়া বনে ফুলসমেত গাছগুলো দেখে নিশ্চিত হওয়া গেল গাছটি বন থেকে নিঃশেষ হয়ে যায়নি। ২০২১ সালে আবার বান্দরবান থেকে নীলগিরি যাওয়ার পথে, নীলগিরি থেকে ১০ কিলোমিটার আগে অনেক সুদৃশ্য ফুলের ভিড়ে এদের কয়েকটি ঝাড় দেখলেন যায়েদ আমীন। তাতে আনন্দ আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেল। প্রাকৃতিক আবাসে কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণীর স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা অবশ্যই ইতিবাচক ঘটনা। শরৎ-হেমন্তে আমাদের নগরগুলো বিবর্ণ ও হতশ্রী হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে আলোচ্য কুশমিকা কিছুটা হলেও বর্ণিত মৌসুমে আমাদের ফুলের দৈন্য ঘোচাতে পারে।

কুশমিকা বা লেডিস আমব্রেলা (Holmskioldia sanguinea) আশ্রয়ে গড়ানো গুল্ম ধরনের শক্ত লতার গাছ। ইংরেজি নাম লেডিস হেডপ্ল্যান্ট, চায়নিজ হ্যাট প্ল্যান্ট ও ম্যান্দারিন হ্যাট। পাতা একক, আগা চোখা, বোঁটা আড়াই সেমি লম্বা, গাঢ় সবুজ, নিচের অংশ ফ্যাকাশে ধরনের, বিপ্রতীপ, ডিম্বাকার বা লম্ব-ডিম্বাকার, ৪ থেকে ৬ সেমি লম্বা, কিনার ঈষৎ দাঁতানো। কচি পাতা ও কুঁড়ি রোমশ। প্রস্ফুটনকাল অক্টোবর থেকে জানুয়ারি। ফুল ডালের আগায় অথবা পাতার কোলে গুচ্ছবদ্ধভাবে থাকে। বৃতি ঘণ্টাকৃতির, প্রায় ২ সেমি চওড়া, দেখতে লালচে কমলা রঙের। দল নলাকার এবং বহিঃস্থ, ঠোঁটাল, ২ সেমি লম্বা ও ওপরের ঠোঁট দুই খণ্ডে বিভক্ত, নিচের ঠোঁট তিন খণ্ড। পুংকেশর ৪টি, ২টি গুচ্ছ। ফল ডিম্বাকার, চার খণ্ড, বীজের সংখ্যাও চার। এরা উপহিমালয় অঞ্চলের প্রজাতি। পৃথিবীর অন্যান্য উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে হলুদ প্রজাতির ফুলও সহজলভ্য। একসময় পূর্ব সিলেটের পাহাড়ে আপনা-আপনিই জন্মাত। আলংকারিক গুল্ম হিসেবে বাগানেও চাষযোগ্য। ফুলদানিতেও বেশ মানানসই। বংশবৃদ্ধি কলমে। চাষের জন্য অপেক্ষাকৃত উঁচু ও উর্বর স্থান প্রয়োজন। গোড়ায় পানি জমলে বাঁচে না।