
বৃষ্টি হলে গাজীপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পর্যাপ্ত নালা না থাকায় ও অপরিকল্পিতভাবে নানা স্থাপনা গড়ে তোলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, কয়েক ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হলে নগরের রাজবাড়ি সড়ক, নলজানি, চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া, বাসন, খাইলকুর, কলমেশ্বর, গাছা, কুনিয়া, তারগাছ, টঙ্গীর হোসেন মার্কেট, এরশাদ নগর, কলেজ গেট, স্টেশন রোড, খাঁ পাড়া সড়ক, আরিচপুর এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টির পানির সঙ্গে কলকারখানার বর্জ্যমিশ্রিত পানি, পয়োনালা ও নর্দমার পানি মিশে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি মাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয় ভোগড়া চৌরাস্তা, মধ্যপাড়া, বাসন, তারগাছ, খাইলকুর, টঙ্গীর হোসেন মার্কেট, খাঁ পাড়া সড়ক, সফিউদ্দিন রোড, সুরতরঙ্গ রোড, লেদু মোল্লা রোড, দত্তপাড়ার হিমার দিঘি রোড, জামাই বাজার, বউ বাজার, আরিচপুর, গাজীবাড়ি, মাছিমপুর, টঙ্গী থানা ও টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল এলাকায়।
মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা মোকলেছুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টি হলে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার কোনো উপায় থাকে না। হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে পানি জমে যায়।
কুনিয়া বড়বাড়ি এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, তাঁদের এলাকা তুলনামূলকভাবে অনেক নিচু। এলাকার ধানখেত ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসিক এলাকা। এই এলাকায় হাজারো শ্রমিক বসবাস করেন। বৃষ্টি হলে উত্তর ও দক্ষিণ খাইলকুর, জয়বাংলা সড়ক ও গাছা এলাকার অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। তখন এলাকাবাসীর কষ্টের আর সীমা থাকে না।
কারখানাশ্রমিক সুমন মিয়া ও সাইদুল ইসলাম বলেন, কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজনকে বাধ্য হয়ে নোংরা পানি মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ ছাড়া বাসাবাড়ি ও পয়োনালার পানি সড়কে পড়ায় সারা বছরই মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
টঙ্গীর অনেকে বলেন, বিভিন্ন এলাকায় আবর্জনার কারণে পানিনিষ্কাশনের নালা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন ময়লা পানি বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়ে।
টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকার ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, ভারী বৃষ্টি হলে স্টেশন রোড কোমরপানিতে তলিয়ে যায়। টঙ্গী হাসপাতাল ও থানার ভেতরেও পানি ঢুকে যায়।
টঙ্গীর আরিচপুরের বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম বলেন, একসময় আরিচপুর ছিল টঙ্গীর অভিজাত এলাকাগুলোর অন্যতম। এখন মানুষ এই এলাকার নাম শুনলে নাক সিঁটকায়। তিনি বলেন, এমনিতেই ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে এলাকায় বাস করা কঠিন। তার ওপর জলাবদ্ধতা তাঁদের শান্তি কেড়ে নিয়েছে।
একই এলাকার স্কুলশিক্ষক মহিবুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হলে টঙ্গী এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুলে হাঁটুপানি জমে যায়।
নগর পরিকল্পনাবিদ শাহরিয়ার হোসেন বলেন, প্রতিটি নগরের একটি মহাপরিকল্পনা থাকে। সে অনুযায়ী, আবাসিক, শিল্প ও অন্যান্য এলাকা গড়ে ওঠে। কিন্তু গাজীপুর নগর গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদনের ক্ষমতা নেই। নকশা অনুমোদন করে রাজউক। তিনি বলেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাঁদের ইচ্ছেমতো বাসাবাড়ি, বিপণিবিতান ও কলকারখানা তৈরি করছেন। কোথাও কোথাও ময়লা জমে নালা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আকবার হোসেন বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অনেক এলাকা আগে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) অধীনে ছিল। যে কারণে বাড়িঘরসহ স্থাপনা নির্মাণে নিয়ম মানা হয়নি। সেসব এলাকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাও খারাপ। তা ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুই পাশে পানিনিষ্কাশনের নালা নেই। এ কারণে ভোগড়া, বাসন, হোসেন মার্কেট ও স্টেশন রোড এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে।