পাখি

লম্বালেজি দুধরাজ

রাজশাহীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির জামবাগানে বাচ্চাসহ স্ত্রী দুধরাজ l ছবি: লেখক
রাজশাহীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির জামবাগানে বাচ্চাসহ স্ত্রী দুধরাজ l ছবি: লেখক

সাদা লম্বালেজি পাখিটিকে দেখেছি বহুবার, দেশে ও বিদেশে। বিচ্ছিন্নভাবে ওর কিছু ছবি তুলেছি বটে, কিন্তু পুরো জীবনচক্র এবং লাল থেকে সাদা হওয়ার বিষয়টি চিত্রিত না করা পর্যন্ত যেন শান্তি পাচ্ছিলাম না! অনেক ঘোরাঘুরির পর পুরো চিত্র ধারণ করতে পেরেছি রাজশাহীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি ক্যাম্পাসের একচিলতে জামবাগান ও পবা উপজেলার বায়া গ্রামের বিশাল আমবাগানে। দুই জায়গাতেই আমি ওদের জীবনচক্রের প্রায় সব মুহূর্ত চোখ ও ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করতে পেরেছি।
লম্বালেজি সুদর্শন পাখিটি দুধরাজ (Asian Paradise Flycatcher)। শাহি বুলবুলি, সাদা সিপাহি বা লাল সিপাহি নামেও পরিচিত। Monarchidae গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম terpsiphone paradisi।
দুধরাজের স্ত্রী-পুরুষ দেখতে আলাদা। পুরুষে পুরুষেও রঙের পার্থক্য থাকে। স্ত্রীর দেহের দৈর্ঘ্য ১৯-২২ সেন্টিমিটার ও ওজন মাত্র ২০ গ্রাম। স্ত্রী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুধরাজের ঝুঁটিসহ মাথা, ঘাড় ও গলা চকচকে নীলাভ-কালো। দেহের ওপরটা, ডানা ও লেজ উজ্জ্বল পিঙ্গল বাদামি। বুকের দিকটা গাঢ় ধূসর যা তলপেটে এসে সাদা হয়ে গেছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রীর মূল পার্থক্য হলো স্ত্রীর লেজ ছোট ও তাতে লম্বা ফিতে পালক নেই। এরা প্রায় দুই বছরে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়। মাথায় চমৎকার খাড়া ঝুঁটিসহ মাথা, ঘাড় ও গলা চকচকে নীলাভ কালো। ডানা ও লেজের পালক সাদা এবং কয়েকটাতে সাদার মাঝে কালো লম্বা রেখা। লেজ প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার ও লেজের সুদৃশ্য লম্বা ফিতে পালক দুটো ৩৩-৩৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে চোখ কালচে ধূসর। ঠোঁট ও চোখের চারদিকে রুপালি-নীল বলয় থাকে। পা ও পায়ের পাতা ধাতব নীল এবং নখর কালচে।
দুধরাজ দুর্লভ আবাসিক পাখি। সারা দেশেই আছে। এদের যেমন বনে দেখা যায়, তেমনি দেখা যায় লোকালয়ের আশপাশে। একাকী বা জোড়ায় বিচরণ করে। উড়ে উড়ে বিভিন্ন ধরনের ডানাওয়ালা কীটপতঙ্গ, প্রজাপতি, ফড়িং ইত্যাদি শিকার করে। কর্কশ স্বরে ডাকে।
মে-জুলাই প্রজননকাল। এ সময় স্ত্রী-পুরুষ মিলে গাছের সরু দোডালা বা তেডালায় শিকড়, ঘাস, পাতা, আঁশ দিয়ে গোলাকার বাসা বানায় ও তাতে মাকড়সার জাল ও ডিম-থলি জড়িয়ে রাখে। ডিম পাড়ে তিন-চারটি। শিকারি প্রাণী ও পাখির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সচরাচর ধৌলি ফিঙের বাসার আশপাশে বাসা বানায়। আমি প্রতিটি ক্ষেত্রে দুধরাজের বাসার কাছে ধৌলি ফিঙের বাসা ও বাচ্চা দেখেছি। ১৪-১৬ দিনে ডিম ফোটে। মা-বাবা দুজনই বাচ্চাদের যত্ন করে। বাচ্চারা ১৬-১৯ দিনে বড় হয় ও উড়তে শেখে।