পাখি

শিকড়ে-প্যাঁচা

শিকড়ে-প্যাঁচা। তেঁতুলিয়া থেকে ছবিটি তোলা l লেখক
শিকড়ে-প্যাঁচা। তেঁতুলিয়া থেকে ছবিটি তোলা l লেখক

পাখি সংরক্ষণের কাজে গত আগস্ট মাসে তেঁতুলিয়ায় গিয়েছিলাম। অসহনীয় গরমের কারণে গাছের ছায়া খুঁজেছি, সময় কাটিয়েছি মহানন্দা নদীর পারে। রাতে রেস্টহাউসে ফেরার পর দেখা পেলাম একটি প্যাঁচার। রাতের অন্ধকারে এটি উড়ে এসে বসেছে একটি লাইট পোস্টের ওপর। ঘাড় ঘুরিয়ে, চারদিকে প্রখর দৃষ্টি। খাবার চাই। উড়ন্ত পোকা পেলেই ধরে ফেলবে। হাতে থাকা টর্চের সুইচ অন করে বোঝা গেল, এটি খয়রা শিকড়ে-প্যাঁচা। দেশের বন ও প্রত্যন্ত বৃক্ষবহুল গ্রাম এলাকায় এদের বসবাস। কিছুক্ষণ পর প্যাঁচাটি উড়ে গেল।
খয়রা শিকড়ে-প্যাঁচা মসৃণ বাদামি পালকে আবৃত নিশাচর পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ৩২ সেন্টিমিটার। পিঠে বাদামি রঙের পালক আছে। দেহের নিচের অংশের পালকের রং লালচে বাদামি। কপালে একটি সাদা দাগ থাকে। অন্যান্য প্যাঁচার সঙ্গে এটির ব্যতিক্রম হলো, এ প্রজাতির লেজ লম্বা এবং লেজের পালকে চওড়া কালো বাদামি ডোরা থাকে। চোখ উজ্জ্বল-হলুদ, পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল হলুদ বা হলদে সবুজ। পুরুষ ও স্ত্রী পাখির চেহারা দেখতে একই রকম। প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই এরা বেরিয়ে পড়ে। খাবার ও দৈনন্দিন কাজের জন্য এরা পুরো রাতই কর্মব্যস্ত থাকে। তবে প্রকৃতি কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে গেলে ওড়াউড়ি করে।

এরা সচরাচর একা বা জোড়ায় বিচরণ করে। রাতে আবাসের চারদিকে শিকার খোঁজে এবং লম্বা নখরের সাহায্যে শিকার ধরে খায়। খাদ্যতালিকায় রয়েছে ছোট উড়ন্ত পোকা, ব্যাঙ, টিকটিকি, কাঁকড়া, খুদে বাদুড়, ছোট পাখি, মেঠো ইঁদুর ইত্যাদি।

পূর্ণিমার রাতে এরা একনাগাড়ে মনোহর সুরে ডাকে। দিনে ছায়াঢাকা গাছের ডালে ঘুমিয়ে সময় কাটায়। মাঝেমধ্যে অন্য পাখিরা এসে ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। মার্চ-জুন মাসে প্রজননের মৌসুমে গাছের কোটরে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। ডিম সাদা। ২৪ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। স্ত্রী পাখি একাই ডিমে তা দেয়। সে সময় পুরুষ পাখি খাবার সংগ্রহ করে এবং স্ত্রী পাখিকে সরবরাহ করে। মা-বাবা দুজন মিলেই ছানাকে খাওয়ায় এবং লালন-পালন করে।

খয়রা শিকড়ে-প্যাঁচার ইংরেজি নাম Brown Hawk Owl । এটি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। বাংলাদেশের সব বিভাগের বনে ও গ্রামে দেখা যায়। পাকিস্তান ও মালদ্বীপ ছাড়া পূর্ব দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় দেখতে পাওয়া যায়।