Thank you for trying Sticky AMP!!

হলুদ কলমি

হলুদ কলমি। ঢাকা শহরের এক বুনো ঝোপের কাছ থেকে তোলা l ছবি: লেখক

গ্রামের মেঠো পথ ধরে তখন কৃষক হলুদ রঙের পাকা ধানের পাঁজা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। গায়ে তাঁর মাঠের ধুলোমাখা। মনে পড়ে কবি জীবনানন্দের কবিতার পঙ্ক্তি ‘তাদের আঙুল ছুঁয়ে চুল্বুল করে ওঠে হেমন্তের মাঠ-ভরা ধান!/ তাদের দেখেছি আমি গেঁয়ো পথে, দেখেছে রে ধাঙড়ের বধূ।’
আকাশের নীলের আভা ততটা নেই যতটা উজ্জ্বল হয়ে থাকে শরৎবেলায়। উত্তরের বাতাস যেন ভাসিয়ে নিয়ে এসেছে হিম মেঘ। যে হিম মেঘ থেকে জল পড়ে না মাটির গায়ে। হালকা রোদের আলোয় খেতের খড়গুলো আরও হলদে হয়ে যায়। হেমন্তের এমন হলুদ রূপ শহরের কোথাও তেমন মেলে না।
সেদিন ঢাকা শহরের গুলশানের এক রাস্তার পাশে গাছগাছড়ার ঝোপের মধ্যে বুনো লতায় অনেক হলুদ ফুলের ঝলক দেখে হেমন্তের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। গ্রামের হেমন্ত কত-না মধুর ছিল আমাদের ছেলেবেলায়! মেঠো ইঁদুরের গর্তে পাকা ধান, নতুন চাল, খুদ ও খড়ের গন্ধ, খইরাঙা হাঁসের পথচলা পায়ের ছাপ, শালিকের খড়ের নিচে পোকা খোঁজা সকাল। আর সেই গ্রামের বুনো ঝোপের এক লতায় ফোটা হলুদ কলমির রূপ। এত দিন পর সেই হলুদ ফুলের কলমিলতার সঙ্গে আবার দেখা। রাজধানীর পথপাশের এ পরিত্যক্ত স্থানে অবহেলায় ও অযত্নে বেড়ে উঠেছে। প্রজাপতি ও কিছু অজানা মধুপায়ী কীট সেই ফুলের কাছে ভিড় জমিয়েছে। একটি নার্সারিতে গিয়ে বললাম এটির বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করেন। বাহারি লতা হিসেবে বাড়ির দেয়ালের পাশে লাগানো যাবে। তেমন পাত্তা দিলেন না সেখানকার দায়িত্বরত লোকটি। ঠিক করলাম বীজ পরিপক্ব হলে নিজেই সংগ্রহ করব। কখনো ভাবিনি ঢাকা শহরের হলুদ কলমির দেখা পাব।
হলুদ কলমি Convolvulacea পরিবারের লতা। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Merremia hederacea। ইংরেজি নাম Ivy Woodrose। কেউ এই লতার ফুলকে কলাডানা বলে থাকেন। পাতা সবুজ, ১-৩ সেমি লম্বা। পাতা দেখেতে পানপাতার মতো। পাপড়ি ৭-১০ সেমি, হলুদ রঙের ফুল, ফোটে হেমন্তে। সপ্তাহ দুয়েক লতায় ফুল ধরে। প্রতিদিন সকালে পাপড়ি থেকে নতুন ফুল ফোটে। রোদ বাড়লে ধীরে ধীরে পাপড়ি নেতিয়ে পড়ে। এই লতা সাধারণত গ্রামের পতিত জমি ও সড়কের পাশে জন্মে। বীজ থেকে চারা হয়। ফুল ফুটলে এই লতাটি সবার দৃষ্টিগোচর হয়। বাহারি লতা হিসেবে এটিকে গ্রাম কিংবা শহরের বাড়িতে লাগানো যেতে পারে। তাতে অন্তত হেমন্তের ফুলের দর্শন পাওয়া বাসনা অনেকটাই ঘুচবে। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর গিয়ে এক কৃষিজমির কাছে এই ফুলের কয়েকটি ঝোপ দেখেছি। বাংলাদেশের, বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেট, ঢাকা ও পার্বত্য এলাকায় হলুদ রঙের আরেকটি কলমি (Merremia gemella) দেখা যায়। ফুলের বর্ণ এক রকম হলেও পাতার আকৃতি ভিন্ন।