
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে প্যারাবন উজাড় করে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে উপজেলা প্রশাসন। নৌবাহিনী, বন বিভাগ ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এ অভিযান পরিচালনা করে মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ অভিযানে চিংড়িঘেরের শ্রমিকদের থাকার ৬টি ঘর এবং খালের মুখে পানি আটকানোর জন্য ব্যবহৃত গাছের গুঁড়ি বা কাঠ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী ৫টি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
অভিযান পরিচালনাকারী দলের সঙ্গে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. খায়রুল হাসানও ছিলেন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার ৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ দ্বীপকে সুরক্ষিত রাখতে যা যা করা দরকার, সেটা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করা হবে। দ্বীপটির সুরক্ষায় সবার সামষ্টিক উপস্থিতির ওপর জোর দেন তিনি।
এ সময় বক্তব্য দেন মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেদায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, আজকে নৌবাহিনীর একটি কন্টিনজেন্ট টিম, বাংলাদেশ পুলিশ ও বন বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে ১১টি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সোনাদিয়ায় থাকা বন বিভাগের বিট অফিস ফিরিয়ে আনতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘অবৈধ দখল পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করে এখানে বনায়ন করা হবে। সোনাদিয়া দ্বীপে নতুন করে প্যারাবন কাটা বন্ধ করেছি আমরা। সবার সহযোগিতায় সেটা আমরা অব্যাহত রাখব।’
২৮ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘প্যারাবন কেটে ব্যবসা, ঘূর্ণিঝড় ঠেকাবে কে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন মহেশখালীতে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সোনাদিয়ার অবৈধ চিংড়ি ও লবণঘেরের বিরুদ্ধে অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, লবণ ও চিংড়িঘের নির্মাণ করতেই মূলত সোনাদিয়ায় হাজার হাজার একর প্যারাবন নিধন করে চলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বর্ষাকালে চিংড়ি চাষ ও শুষ্ক মৌসুমে লবণ চাষ—এই দুই উৎস থেকে আয়ের লোভ বেপরোয়া করে তুলেছে তাঁদের।
প্যারাবন নিধন করে গড়ে তোলা এসব চিংড়িঘের ও লবণচাষির কেউ লাভের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে লবণের ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা রাখেন মহেশখালীর এমন একজন ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি একরে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ মণ লবণ উৎপাদন হয়। সরাসরি মাঠ থেকে প্রতি মণ লবণ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। কেউ কেউ সরাসরি লবণের মিলে নিয়ে গিয়ে লবণ বিক্রি করেন। সে ক্ষেত্রে লবণের পরিমাণ ও দাম—দুটিই বেড়ে যায়। গড়ে প্রতিবছর এক একরে আট লাখ টাকা আয় হয়। সে হিসাবে কেউ যদি ২০ একর প্যারাবন দখল করেন, তাহলে শুধু লবণ থেকে তাঁর আয় হবে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার মতো। এরপর আছে বর্ষায় চিংড়ি চাষ, যেখানে লাভ হয় লবণের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
বর্ষাকালে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয় প্রায় ১০০ থেকে ১ হাজার একর জায়গাজুড়ে। সোনাদিয়ায় এ রকম চিংড়ির প্রজেক্ট (প্রকল্প) আছে প্রায় ৫০টি। সোনাদিয়ার আশপাশের ঘটিভাঙ্গা ও বড় মহেশখালী মৌজায় আছে আরও ১৫টির মতো চিংড়ি প্রজেক্ট। ঘটিভাঙ্গার পশ্চিমে এখনো প্যারাবন কাটা চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
চিংড়ির প্রজেক্টগুলো একেকটি গড়ে উঠেছে ৫০০ একর জায়গাজুড়ে। একেকটি প্রজেক্টে বছরে ২ কোটি থেকে আড়াই কোটি টাকার মতো আয় হয়। তবে কেউ চিংড়ির উৎপাদন সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেননি।