ময়মনসিংহের বুড়াপীরের মাজারের পেছনে ফলসহ ভুঁইডুমুরগাছ
ময়মনসিংহের বুড়াপীরের মাজারের পেছনে ফলসহ ভুঁইডুমুরগাছ

প্রকৃতি

ভুঁইডুমুরের আখ্যান 

ময়মনসিংহ শহরঘেঁষা ব্রহ্মপুত্রের তীরে বুড়াপীরের মাজার। মাজারের পেছন দিক দিয়ে একটি রাস্তা চলে গেছে পশ্চিমে—বালুঘাট ও কাছারিঘাটের দিকে। রাস্তার উত্তর পাশে ছায়াঘেরা গ্রাম। সম্প্রতি সেই রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে চোখে পড়ল ভুঁইডুমুর। মাটির ওপর যেন হামাগুড়ি দিয়ে চলেছে। ওপরের দিকে মাথা তুলে আছে কিছু শাখা। ডুমুরের মতো ফল না দেখলে অনেকেই চিনতে পারবেন না যে এটা একধরনের ডুমুরগাছ। মাটির গায়ে লতানো অবস্থায় থাকে বলে এর নাম ভুঁইডুমুর। 

অন্য ডুমুরজাতীয় উদ্ভিদের মতো এর ফুলও হাইপ্যান্থোডিয়াম নামের বিশেষ ধরনের পুষ্পমঞ্জরিতে থাকে। তাই ফুল বাইরে থেকে দেখা যায় না। এটি Moraceae পরিবারের লতানো বীরুৎ। শাখা শায়িত। উদ্ভিদটি দক্ষিণ চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। 

বাংলাদেশের নদীতীরবর্তী অঞ্চলে, পুকুরের পাশে, খাল-বিল ও ঝিলের পাশে এ উদ্ভিদটি দেখা যায়। পাতাগুলো হয় ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা, বহুখণ্ডযুক্ত বা গোলাকার থেকে বল্লমাকার বা ডিম্বাকার। পাতা খুব রুক্ষ, শীর্ষভাগ তীক্ষ্ণ, কিনারা দাঁতের মতো খাঁজকাটা। ছোট ছোট পাতাগুলো দৈর্ঘ্যে ৫ থেকে ৭ এবং প্রস্থে ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার হয়।

উদ্ভিদে সাধারণত দুটি ভিন্ন ধরনের পাতা থাকে বলে এর প্রজাতির নাম হেটেরোফাইলা। আর ফলের ভেতরে থাকে ফুল। ফল ডিম্বাকার, ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। ফল এককভাবে পাতার অক্ষে জন্মায়। পুরুষ ফুল বৃন্তযুক্ত। স্ত্রী ফুলগুলো বৃন্তহীন। পাকা ফল গাঢ় কমলা রঙের ও মসৃণ। মে-জুন মাসে ফল পাকে। 

ভুঁইডুমুরগাছ

ভুঁইডুমুরের ফল খাওয়া যায়। পাতা ও শিকড়ের রস ভারত উপমহাদেশে স্থানীয় ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলের নির্যাসে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও প্রদাহবিরোধী উপাদান রয়েছে। বাকল অ্যাজমা ও অর্শ্ব রোগে ব্যবহার করা হয়। কাঁচা ফলের ব্যবহার রয়েছে কাশি ও লিউকোরিয়া রোগে। পাতা ও বাকল চর্মরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

এ ছাড়া নাক থেকে রক্ত পড়া, প্যারালাইসিস, যকৃতের রোগ, বুকের ব্যথায় ভুঁইডুমুরের ব্যবহার অনেক দিনের। বাতজনিত রোগে আক্রান্ত স্থানে বা কানের সংক্রমণে পাতার ‘পেস্ট’ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ