
নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ বা সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ড, যেটিকে প্রায়ই বাংলাদেশের ‘প্রবাল দ্বীপ’ নামে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, আজ এক ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্র। কয়েক দশকের সরকারি অবহেলা, অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন এবং পর্যটনের এই দ্বীপকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। ব্যাপক বিশ্বাসের বিপরীতে বলা দরকার, প্রাকৃতিকভাবে এটি কোনো প্রবাল দ্বীপ নয়, এটি একটি প্রবাল বহনকারী বাস্তুতন্ত্র। অনন্য ভূতত্ত্ব ও জীববৈচিত্র্য দ্বীপটিকে একটি জাতীয় রত্ন করে তুলেছে। তবে সেই রত্ন এখন পদদলিত, যার বেশির ভাগ ক্ষতি এড়ানো সম্ভব ছিল।
১৯৮০ সালে যখন আমি প্রথমবারের মতো গবেষণার জন্য দ্বীপটিতে যাই, তখন সেখানে ছিল মাত্র তিন হাজার বাসিন্দা, একটি জরাজীর্ণ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং কয়েক শ শীতকালীন দর্শনার্থী। ছোট্ট একটি নৌকাঘাটে ছিল গুটিকয় দোকান নিয়ে একটি বাজার। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন তখন ছিল সাবরাং ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড, এখন পুরোদস্তুর একটি ইউনিয়ন।
উত্তর পাড়া নামে জায়গাটিতেই বাস করত বেশির ভাগ মানুষ; ছিল নানা দোকান এবং একটি দরজি ও চুল কাটার ঘর। দ্বীপের মাঝের পাড়া বা কোনাপাড়া, দক্ষিণ পাড়া, পশ্চিম পাড়া কিংবা অন্য কোথাও কোনো মুদিদোকানও ছিল না। সারা দ্বীপে ছিল কেবল একটি স্কুল, কয়েকটি মক্তব ও মাদ্রাসা। কোনো পাকা সড়ক ছিল না। মাছ ধরা ও কৃষিকাজই ছিল দ্বীপবাসীর একমাত্র জীবিকা।
আজ এই দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ১২ হাজারে পৌঁছেছে। প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ পর্যটক আসে। পরিবেশগতভাবে কোনোভাবেই এমন একটি ব্যস্তসমস্ত ব্যবসাকেন্দ্র বা পর্যটনশিল্প হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত ছিল না। নির্মাণের ওপর দীর্ঘস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেখানে সরকারি অফিস, হোটেল, শ্যালে ও ব্যক্তিগত বাড়িঘর অবৈধভাবে বেড়েই চলেছে। মিঠাপানির পুকুর, রাহাবন বা ম্যানগ্রোভ প্যাচ, স্থানীয় গাছপালা ও ঝোপঝাড়, উপহ্রদ বা লেগুন এবং বিক্ষিপ্তভাবে বিস্তৃত বেলেপাথরের বড় বড় চাঁইয়ের পাথুরে পতিত খেতের নুড়িপাথর লুট করা বা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘরবাড়ি, দালানকোঠা ও সরাইখানা বানানোর জন্য কেটে ফেলা হয়েছে দ্বীপটিকে বেষ্টন করে রাখা কেয়াগাছের প্রাচীর। বিভিন্ন নির্মাণের কারণে সরিয়ে ফেলা হয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন প্রবাল পাথর, যা ছিল একেকটি মানুষের চেয়েও দীর্ঘ। ফলে উপকূলরেখা ক্ষয় এবং ঝড়ের তীব্রতায় আক্রান্ত হয়েছে।
১৯৮০ সালে যখন আমি প্রথমবারের মতো গবেষণার জন্য দ্বীপটিতে যাই, তখন সেখানে ছিল মাত্র তিন হাজার বাসিন্দা, একটি জরাজীর্ণ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং কয়েক শ শীতকালীন দর্শনার্থী। ছোট্ট একটি নৌকাঘাটে ছিল গুটিকয় দোকান নিয়ে একটি বাজার।
অতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে আশপাশের জলরাশি প্রায় খালি হয়ে গেছে। রেস্তোরাঁ ও রিসোর্টগুলো এখন ভরপুর মৌসুমে মূল ভূখণ্ড থেকে মাছ আমদানি করতে বাধ্য হয়। অপরিকল্পিত জীবিত প্রবাল, পাথর, শামুক-ঝিনুক, মাছ ও রঙিন প্রাণী আহরণের ফলে এসব প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে।
অনিয়ন্ত্রিত গণপর্যটন দ্বীপটিকে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত করেছে। সেখানে সরকারের অর্থবহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম প্রয়োগের তেমন কোনো ভূমিকা আদতে নেই। দ্বীপটির সুরক্ষিত প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা–ব্যবস্থাগুলো ভেঙে তার পরিবর্তে এমন বিশৃঙ্খল ও মুনাফাচালিত উন্নয়ন করা হয়েছে, যা এর বাসিন্দা বা পরিবেশকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলেছে।
আজ এই দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ১২ হাজারে পৌঁছেছে। প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ পর্যটক আসে। পরিবেশগতভাবে কোনোভাবেই এমন একটি ব্যস্তসমস্ত ব্যবসাকেন্দ্র বা পর্যটনশিল্প হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত ছিল না। নির্মাণের ওপর দীর্ঘস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেখানে সরকারি অফিস, হোটেল, শ্যালে ও ব্যক্তিগত বাড়িঘর অবৈধভাবে বেড়েই চলেছে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ একটি দুর্ভেদ্য খোলস আকৃতির বিশাল পাথরের ভিত্তির ওপর অবস্থিত, যা বৃষ্টির পানিকে ভূগর্ভস্থ মাটির মধ্যে আটকে রাখে। এই ভঙ্গুর পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা একসময় এর মানুষ ও বন্য প্রাণী উভয়কেই টিকিয়ে রেখেছিল। পর্যটনের বিস্ফোরণের ফলে এখন সেখানে শত শত বাড়িঘর ও শৌচাগার; অথচ মানব–বর্জ্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এসব মানব–বর্জ্য সমুদ্রে প্রবেশ করতে না পেরে পান, রান্না ও গোসলের জন্য ব্যবহৃত ভূগর্ভস্থ অগভীর পানির উত্সগুলোতে অনুপ্রবেশ করে। অপ্রক্রিয়াজাত বর্জ্য–জল, কৃষি রাসায়নিক এবং কীটনাশক মাটিতে জমে যে আসন্ন জনস্বাস্থ্য–বিপর্যয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, সরকার এখনো তা গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন বা মোকাবিলা করতে পারেনি।
ক্রমাগত ক্ষয়, লবণাক্ত জলের অনুপ্রবেশ এবং উচ্চ জোয়ারের সত্বর বৃদ্ধি ফসলের জমি ধ্বংস করেছে, ঘরবাড়ি প্লাবিত করেছে এবং মিঠাপানির উত্সগুলোকে ডুবিয়ে দিয়েছে। প্রাকৃতিক গাছপালার সমর্থনকারী অনেক এলাকা এখন আর ফসল ফলাতে পারে না। বছরের পর বছর ধরে দ্বীপটির যথাযথ ব্যবস্থাপনা, পূর্ণকালীন সংরক্ষণ এবং পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল। অথচ নীতির অভাব, প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দ্বীপটিকে নিঃশেষিত করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৯ মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটক প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্ত দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুতন্ত্রকে কিছুটা নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এর ফলাফল দৃশ্যমানও হয়ে উঠেছে। কেওড়া, রাহাবন বা লুমনিটজেরা রেসিমোসা, অ্যাভিসেনিয়া মেরিনা, প্রেমনা ওডোরাটা, হিবিস্কাস টিলিয়াসিয়াস, থেস্পেসিয়া পপুলনিয়া, ভাইটেক্স ট্রাইফোলিয়া এবং অন্যান্য স্থানীয় উদ্ভিদ প্রজাতি ছাড়াও গ্রাম, পতিত জমি, খোলা মাঠ এবং পুরাতন প্রবাল বোল্ডার অঞ্চলে লক্ষণীয়ভাবে পুনরুত্থিত হয়েছে।
সৈকতে নবজীবন পেয়েছে ক্ষুদ্র সৈকত–কাঁকড়া বুদ্বুদ। সৈনিক কাঁকড়া ফিরে এসেছে। জোয়ার কমার সঙ্গে সঙ্গে জটিল পুঁতির কাজ দিয়ে বালুকাবেলার ওপর সেগুলো নতুন শিল্পকর্ম তৈরি করছে।
এসব ইতিবাচক রূপান্তর একটি সহজ সত্য প্রমাণ করে: মানুষের পদচারণ কমলে সেন্ট মার্টিন নিজেই নিজেকে সুস্থ করে তুলতে সক্ষম।
গত ২২ নভেম্বর সেখানে গিয়ে দেখতে পেয়েছি, একটি জলপাইরঙা কাছিম বা অলিভ রিডলে কচ্ছপ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আগে বাসা বেঁধেছে। এটা আশাব্যঞ্জক লক্ষণ। মানুষের উপদ্রব কমায় সৈকতের অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
ছেঁড়াদিয়া ক্লাস্টারের দক্ষিণ দুটি দ্বীপ, পর্যটকের কলকাকলিতে যা সব সময় সরগরম থাকত, দীর্ঘস্থায়ী নীরবতায় সবচেয়ে তেজি পরিবেশগত পুনরুদ্ধার দেখিয়েছে। সেখানে গড়ে উঠেছে অপূর্ব একটি প্রাকৃতিক বন।
এসব ইতিবাচক রূপান্তর একটি সহজ সত্য প্রমাণ করে: মানুষের পদচারণ কমলে সেন্ট মার্টিন নিজেই নিজেকে সুস্থ করে তুলতে সক্ষম।
চ্যালেঞ্জটা হলো সরকার কি দ্বীপটির সেরে ওঠার এই গতিকে প্রকৃত ও স্থায়ী সুরক্ষা দেবে, নাকি আগের ধারায় অপরিবর্তনীয় ক্ষতির দিকে ধাবিত হতে দেবে?
এত সব নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কিন্তু অবৈধ নির্মাণ এখনো চলছে। উপকূলীয় রিসোর্টের উজ্জ্বল আলো বিভ্রান্ত করছে কচ্ছপ–শিশুদের। দ্বীপের বিপুল সংখ্যায় বিস্ফোরিত কুকুরগুলো কচ্ছপের বাসা বাঁধার জন্য বড় হুমকি হিসেবে এখনো থেকে গেছে। এই কুকুরগুলো কচ্ছপের বাসা থেকে ডিম চুরি করে এবং বন্য প্রাণীর জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগটি নামকাওয়াস্তে। ফলে আবর্জনার স্তূপ অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে।
এসব ব্যর্থতা আরও গভীর একটি সমস্যা তুলে ধরে। সেন্ট মার্টিনে এখনো কার্যকর ও সুচিন্তিত ব্যবস্থাপনার অভাব প্রকট। দ্বীপটিতে প্রয়োজন পূর্ণকালীন সংরক্ষণ কর্মী, প্রশিক্ষিত বন্য প্রাণী প্রহরী, প্রকৃত প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা ও নিয়মকানুন। কেবল ঋতুকালীন বিধিনিষেধ এবং প্রতীকী ঘোষণা দিয়ে দ্বীপটির বৈশিষ্ট্য রক্ষা করা যাবে না।
সেন্ট মার্টিনের বেঁচে থাকা এখন নির্ভর করছে কিছু জরুরি বিজ্ঞান-সমর্থিত এবং প্রয়োগযোগ্য পদক্ষেপের ওপর:
পরিবেশ ব্যবস্থাপনা:
* জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুসরণ করে প্রতিদিন বাধ্যতামূলক আবর্জনা সংগ্রহ এবং সেসবের যথাযথ নিষ্কাশন।
* সমুদ্রসৈকত এবং প্রবাল বহনকারী শিলা অঞ্চলের কাছাকাছি সব রকমের মোটরচালিত যান, বগি এবং মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা।
* নির্ধারিত এলাকার বাইরে নৌকা নোঙর করার ওপর নিষেধাজ্ঞা।
* প্রয়োজনীয় জেটি, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং বন্দর ছাড়া কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণের ওপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ।
* সৌরবিদ্যুৎ এবং বৃষ্টির জল সংগ্রহের বাধ্যতামূলক ব্যবহার।
* বাসিন্দা ও সীমিত দর্শনার্থীদের মিঠাপানি সরবরাহের জন্য মিনি ডিস্যালিনেশন বা মোবাইল ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট স্থাপন।
* সমস্ত জৈব–বর্জ্য এবং নর্দমা থেকে প্রাপ্ত বর্জ্য শোধন এবং সার হিসেবে কম্পোস্ট করে দ্বীপবাসীদের সরবরাহ করার ব্যবস্থা নেওয়া, যা ফসল ও সবজিখেতে সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
* মাছ ধরার নৌকা অবতরণ এবং স্থানীয় নৌকা নোঙর করার জন্য উপযুক্ত বন্দর তৈরি করা।
* পরিবেশ ও বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপকদের সহায়তা করার জন্য স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসার ছাত্র ও বেকার যুবকদের নিয়ে জীববৈচিত্র্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা।
* দোকানদার ও গ্রামবাসীদের জল, বিদ্যুৎ ও আবর্জনার যথাযথ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
* দ্বীপে ও উপকূলে ছড়িয়ে থাকা পাথর ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা।
* সুনির্দিষ্ট সমুদ্রসৈকত থেকে সীমিত পরিমাণে মৃত খোলস এবং ফ্লোটস্যাম সংগ্রহ করে হস্তশিল্প এবং কিউরিও তৈরিতে গ্রামবাসীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
সেন্ট মার্টিনে এখনো কার্যকর ও সুচিন্তিত ব্যবস্থাপনার অভাব প্রকট। দ্বীপটিতে প্রয়োজন পূর্ণকালীন সংরক্ষণ কর্মী, প্রশিক্ষিত বন্য প্রাণী প্রহরী, প্রকৃত প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা ও নিয়মকানুন। কেবল ঋতুকালীন বিধিনিষেধ এবং প্রতীকী ঘোষণা দিয়ে দ্বীপটির বৈশিষ্ট্য রক্ষা করা যাবে না।
কঠোর নিয়ন্ত্রণ:
* জোয়ারের ঢেউ এবং লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ রোধ করতে দ্বীপের সীমানাজুড়ে কেওড়া বনের পুরু প্রাচীর তৈরি করতে হবে। নিশিন্দা-ভাইটেক্স ট্রাইফোলিয়া প্ল্যান্টেশনের ভেতরের স্তর তৈরি করতে হবে।
* সব উপহ্রদ বা লেগুনের মুখ এমনভাবে খনন করা, যাতে উভয় জোয়ার প্রতিটি লেগুনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এ ব্যবস্থা করা গেলে জমে থাকা পানির দুর্গন্ধ বন্ধ হবে, মশার প্রজননক্ষেত্রকে রোধ করবে, মাছের ব্যাপক প্রজননকে উত্সাহিত করবে এবং পাখিদের আকর্ষণ করবে।
বন্য প্রাণী সুরক্ষা:
* গবেষক ও অনুমোদিত কর্মকর্তা ছাড়া তিনটি ছেঁড়াদিয়া দ্বীপকে কঠোরভাবে ‘নো-গো জোন’ ঘোষণা করা।
* দ্বীপের এক কিলোমিটারের মধ্যে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা।
* বিপথগামী কুকুর অপসারণ করা; নিবন্ধন, লিশিং ও টিকাদানের মাধ্যমে গৃহপালিত কুকুর কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
* কচ্ছপ যেসব সৈকতে বাসা বাঁধে, সেখান থেকে বালুর বস্তা অপসারণ করে কচ্ছপের বাসাগুলোর সার্বক্ষণিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
* প্রশিক্ষিত সরকারি কর্মীদের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা টহল এবং বন্য প্রাণী পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা।
টেকসই পর্যটনের জন্য নিচের ব্যবস্থাগুলো জরুরিভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে:
* এখনকার মতো দৈনিক দুই হাজার দর্শনার্থীর সীমা কার্যকর রাখা।
* সমস্ত বাসিন্দা, বিক্রেতা ও গবেষকদের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে শাহপরীর দ্বীপ বা টেকনাফে যাতায়াতের জন্য স্থায়ী পাসের ব্যবস্থা করা।
* সব স্থানীয় নৌকার সেন্ট মার্টিনের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা।
* প্রতিবছর মার্চ-অক্টোবর দ্বীপ বন্ধ রাখার নির্দেশিকা জারি করা।
* শুধু কিউআর-কোডেড পাস এবং অনুমোদিত জাহাজ চলাচলের নির্দেশিকা জারি করা।
* রাতের আলো, শব্দ ও সমুদ্রসৈকতের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা।
* সামুদ্রিক কচ্ছপ, কাঁকড়া, প্রবাল, পাখি এবং অন্যান্য বন্য প্রাণীর ক্ষতি বা উৎপাত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা।
* পলিথিন নিষিদ্ধ এবং ডিসপোজেবল প্লাস্টিক সীমিত করে পচনযোগ্য চট বা সস্তা কাপড়ের ব্যবহার চালু করা।
* নির্ধারিত ইটের রেখাযুক্ত রাস্তা দিয়ে অভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্য সৌরশক্তি বা ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানবাহনের অনুমতি দেওয়া।
সেন্ট মার্টিন নিছক একটি পর্যটনস্থল নয়, এটি বাংলাদেশের জাতীয় পরিবেশগত ঐতিহ্যবাহী স্থান। সঠিক উদ্যোগ না নিলে এর ক্ষতি হবে অপূরণীয়। সে উদ্যোগ নিতে যারা ব্যর্থ হবে, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।
সরকারের প্রতি আহ্বান
সেন্ট মার্টিন দ্বীপটিকে একসময়ের ক্ষয়প্রাপ্ত কঙ্কাল নয়, বরং একটি জীবন্ত এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের যোগ্য প্রবালবেষ্টিত দ্বীপ হিসেবে দেখতে চাওয়ার অধিকার বাংলাদেশের বর্তমান জনগণ এবং এর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আছে। বাংলাদেশের যেকোনো সরকারের এ ব্যাপারে ভূমিকা পালন করার নৈতিক দায়বদ্ধতা অনুভব করা দরকার।
৯ মাসের দর্শনার্থী নিষেধাজ্ঞা দ্বীপটিকে দৃষ্টিগ্রাহ্য পরিবেশগত সুবিধা দিয়েছে। তবে এটুকুই যথেষ্ট নয়। এই দ্বীপটিকে বাঁচানোর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, পর্যাপ্ত তহবিল এবং সার্বক্ষণিক পরিচর্যার জন্য একটি স্থায়ী বিজ্ঞানভিত্তিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
সেন্ট মার্টিন নিছক একটি পর্যটনস্থল নয়, এটি বাংলাদেশের জাতীয় পরিবেশগত ঐতিহ্যবাহী স্থান। সঠিক উদ্যোগ না নিলে এর ক্ষতি হবে অপূরণীয়। সে উদ্যোগ নিতে যারা ব্যর্থ হবে, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।
এই অনন্য বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচানোর জানালাটি সংকীর্ণ, তবে এখনো খোলা। বর্তমান অন্তর্বর্তী এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সরকারগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে বাঁচানোর না ধ্বংস করার জন্য নেতৃত্ব দেবে।