আজ এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)
আজ এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)

অচল ইলেকট্রনিক পণ‍্য বাসায় ফেলে রেখেছে ৭২ শতাংশ মানুষ: টিআইবি

ইলেকট্রনিক পণ্য কীভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা পায়নি ৮৮ শতাংশ মানুষ। ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জ্ঞান ও চর্চা জানার জন্য ৬৭৫ ভোক্তা নিয়ে পরিচালিত অনলাইন জরিপে এমন মতামত উঠে এসেছে। সবশেষ অচল ইলেকট্রনিক পণ্য বাসায় ফেলে রেখেছেন ৭২ শতাংশ মানুষ। আর ভাঙারিওয়ালার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন ১৫ শতাংশ ভোক্তা।

‘বাংলাদেশে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত কোনো ই-বর্জ্য সংগ্রহকেন্দ্র তৈরি হয়নি।

ই-বর্জ্য হলো অচল বা বাতিল ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশ। যেগুলো নির্ধারিত মেয়াদ শেষে ব্যবহারকারী আর ব্যবহার না করে ফেলে দিতে চান। সঠিক ব্যবস্থাপনা করা না হলে এসব ই-বর্জ্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হতে পারে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সুশাসনের ঘাটতি আছে, দুর্নীতি হয়। পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে অবৈধ লেনদেন আছে। পুরোনো ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি অবৈধ হওয়ার পরও তা হচ্ছে। রপ্তানিতেও অনিয়ম আছে। সরকারের দিক থেকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। যে আইন আছে, তার প্রয়োগে আগ্রহ নেই। সরকার ধারাবাহিকভাবে ব‍্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সব মিলে ই-বর্জ্য খাতে একধরনের অরাজকতা বিরাজ করছে।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ই-বর্জ্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে, পরিবেশের ক্ষতি করে। এটি নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। জবাবদিহির ঘাটতিও ব্যাপক। ব্যবহারকারীর সচেতনতা নিশ্চিত করার ব‍্যর্থতা বেশি ঝুঁকি তৈরি করেছে। তবে ই-বর্জ্য একদিকে যেমন ঝুঁকি, অন‍্যদিকে এটি সম্ভাবনা। যথাযথ ব‍্যবস্থাপনা না করা গেলে এটা অর্থ আয়ের উৎস হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত ই-বর্জ্যের কোনো প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায় না। তবে বুয়েটের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদপ্তরের করা সমীক্ষা অনুসারে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত ই-বর্জ্যের পরিমাণ ৩১ কোটি টন। এর মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি হয়। ৯৭ শতাংশ ই-বর্জ্য অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে করা হয়ে থাকে। ৮৪টি ভাঙারি ব্যবসার ওপর জরিপে দেখা যায়, এরা ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালার অধীন নিবন্ধিত হয়নি। তবে এদের মধ্যে ৭৬টির ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে।

গবেষণা বলছে, ২০২২ সালের বন্যায় ২৪ হাজার ১৩ টন ই-বর্জ্য তৈরি হয়েছিল। ঢাকার অপ্রাতিষ্ঠানিক উপায়েই বছরে প্রায় ১ হাজার ১৭৩ টন ই-বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এ বর্জ্য সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা গেলে ৩১ টন তামা উৎপাদন করা সম্ভব। এ থেকে বছরে সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি আয় করা সম্ভব। ২০২৫ থেকে ২০৬০ সালের মধ্যে সোলার প্যানেল থেকেই ৫৫ লাখ টন ই-বর্জ্য তৈরি হবে। এ ছাড়া ২০২২ থেকে ২০২৫ সময়ের মধ্যে দেশে ১৬ হাজার ৭২৪টি বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি হয়েছে। এগুলো থেকেও ই-বর্জ্য তৈরি হবে।

সবার নজর এড়িয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ই-বর্জ্য রপ্তানি হয় কিছু পাইকারি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে। এ বছর ৫০০ টনের অনুমতি নিয়ে রপ্তানি করা হয়েছে ৯৬৮ টন। গত বছর ১ হাজার টনের অনুমতি নিয়ে রপ্তানি করা হয় ১ হাজার ৬৩৯ টন।

ই-বর্জ্য বিধিমালায় বৈদ্যুতিক গাড়ি, সোলার প্যানেল, ব্যাটারিচালিত খেলনা, ড্রোন ইত্যাদি তালিকাভুক্ত করা হয়নি। অথচ ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারি যানবাহন কেনার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ বৈদ্যুতিক যানবাহন কেনার নীতিমালা করা হয়েছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা বিপুলসংখ্যক ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিষ্পত্তির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে কোনো নির্দেশনা নেই। ব্যাংকের এটিএম নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও বিশেষায়িত নীতিমালা নেই।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুরোনো ইলেকট্রনিক পণ্য জমা নিয়ে কম দামে নতুন পণ্য সরবরাহের প্রচলন আছে। এটি ‘বাইব্যাক অফার’ নামে পরিচিত। টিআইবির ভোক্তা জরিপ বলছে, ৭৩ শতাংশ ভোক্তা কোনো বাইব্যাক অফার পায়নি। গবেষণার পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে না। ই-বর্জ্য আমদানি অব্যাহত থাকা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার পরিচয় দেয়। প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ই-বর্জ্যের একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১ সংশোধন করতে হবে।

শুরুতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আজকের অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) মুহাম্মদ বদিউজ্জামান, পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির দুই গবেষক আবদুল্লাহ জাহিদ ওসমানী ও মো. নাবিল হক।