বাংলাদেশের নারীশিক্ষায় যুক্ত মালালা
নোবেলজয়ী মালালার অলাভজনক এ সংস্থা বাংলাদেশে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া মেয়েদের শিক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছে ‘মালালা ফান্ড’। ‘মালালা ফান্ড’ নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মালালা ইউসুফজাইয়ের আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা। বাংলাদেশের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সংস্থাটি কাজ শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত চর, হাওর ও উপকূলের দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের শিক্ষার উন্নতিতে কাজ করবে।
ফ্রেন্ডশিপ, গণসাক্ষরতা অভিযান ও পিপলস্ ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন—তিনটি প্রতিষ্ঠান মালালা ফান্ডের অর্থায়নে দেশে মেয়েদের শিক্ষায় কাজ করবে। প্রতিষ্ঠান তিনটি আগে থেকেই দেশের প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষায় কাজ করে আসছে। তিনটির মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে মালালা ফান্ডের আওতায় কাজ শুরু করেছে।
মালালা পাকিস্তানের নারীশিক্ষা অধিকারকর্মী। তিনি ২০১৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল পুরস্কার পান তিনি।
মালালার জন্মস্থান পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়ার সোয়াত উপত্যকা। সেখানে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছিল পাকিস্তান তালেবান। এর বিরোধিতা করেছিলেন মালালা। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর স্কুল থেকে ফেরার সময় মালালাসহ তিনজনকে গুলি করে তালেবান। তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। ধীরে ধীরে তিনি সেরে ওঠেন।
মালালা ও তাঁর বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই ২০১৩ সালে গঠন করেন ‘মালালা ফান্ড’। মালালা ফান্ডের অর্থায়নে বিশ্বের নয়টি দেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘এডুকেশন চ্যাম্পিয়নস নেটওয়ার্ক’ কর্মসূচি। দেশগুলো হলো—ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, লেবানন, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া, তুরস্ক, ব্রাজিল ও বাংলাদেশ। নেটওয়ার্কের উদ্দেশ্য—বিশ্বের সব মেয়ে যেন ১২ বছরের শিক্ষা নিরাপদে শেষ করতে পারে।
বাংলাদেশে মালালা ফান্ডের প্রতিনিধি মোশাররফ তানসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২০ সালে আমরা বাংলাদেশে কাজ শুরু করি। কাজ শুরুর আগে আমরা সরকারের এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিই।’
মালালা ফান্ড প্রথমে দেশের নারীশিক্ষা, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মেয়েদের শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে একটি গবেষণা করে। গবেষণায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত হয়।
এরপর ২০২১ সালে মাঠপর্যায়ে কাজের জন্য প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়। ১৩টি থেকে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে এডুকেশন চ্যাম্পিয়নস নেটওয়ার্কে কাজের জন্য চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হয়েছে।
তিনটি লক্ষ্য
মালালা ফান্ড বৈশ্বিকভাবে তিনটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। লক্ষ্যগুলো হলো—শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি, শিক্ষার ক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা (যেমন— বাল্যবিবাহ ও কুসংস্কার) ও শিক্ষা খাতে আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানো। মোশাররফ তানসেন বলেন, ‘বৈশ্বিক তিনটি লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। লক্ষ্যগুলো হলো—শিক্ষার মান নিশ্চিত করা, মেয়েদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুত করা, ছেলে ও মেয়েদের মধ্যকার ডিজিটাল দক্ষতার পার্থক্য কমিয়ে আনা।’
পিপলস্ ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছে। তাদের ভাসমান স্কুল কর্মসূচি শিক্ষা অব্যাহত রাখায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
পিপলস্ ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশনের জেলা সমন্বয়কারী ও মালালা ফান্ডের এডুকেশন চ্যাম্পিয়নস নেটওয়ার্কের প্রকল্প সমন্বয়কারী ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘মালালা ফান্ডের অর্থায়নে আমরা কিশোরগঞ্জের নিকলী এলাকায় কাজ করব। ১০ আগস্ট আমরা কাজ শুরু করেছি। কাজের ব্যাপারে বিস্তারিত এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে নতুন কাজ করব। শিক্ষা নিয়ে যে কাজ আগে হয়নি, এমন কাজ করব।’
ফ্রেন্ডশিপ এক দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলে। ফ্রেন্ডশিপ মালালা ফান্ডের কর্মসূচির মাধ্যমে চর এলাকার সরকারি স্কুলের দেড় হাজার মেয়েকে তথ্য–প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দেবে। আর গণসাক্ষরতা অভিযান একই ধরনের কাজ করবে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, খুলনা, মেহেরপুর ও হবিগঞ্জে। তিনটি প্রতিষ্ঠানই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করবে।
আরও পড়ুন
-
পৃথিবীর কোন দেশে সেন্ট্রাল ব্যাংকে ঢুকতে পারছে অবাধে: ওবায়দুল কাদের
-
পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসনে হাজার কোটি টাকা বাড়তি চায় চীনা ঠিকাদার
-
রাঙামাটিতে এলোপাতাড়ি গুলিতে ইউপিডিএফের কর্মীসহ দুজন নিহত
-
বিশ্বের সেরা এয়ারলাইনস আট মাসের বেতনের সমান বোনাস দিচ্ছে
-
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজের ভেন্যুতে ঝড় বয়ে গেছে