
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
বিজয় মানে কি শুধুই প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা? নাকি বড় কোনো সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পাওয়াও এক ধরনের বিজয়? আজ ২৭ ডিসেম্বর, আমাদের এই বিজয়ের মাসে আমরা দৃষ্টি দেব মধ্য ইউরোপের চেক প্রজাতন্ত্রের দিকে। যদিও তাদের রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা দিবস ভিন্ন তারিখে, কিন্তু ১৯৯২ সালের এই ডিসেম্বর মাসটি তাদের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী মোড়, যা বিশ্ববাসীর কাছে ‘ভেলভেট ডিভোর্স’ বা ‘শান্তিপূর্ণ বিচ্ছেদ’ নামে পরিচিত।
১৯৯২ সালের শেষ সপ্তাহ। চেকোস্লোভাকিয়া নামের ৭৫ বছরের পুরোনো দেশটি তখন ভাঙনের মুখে। সেই সময়ে বলকান অঞ্চলে যুগোস্লাভিয়া ভেঙে টুকরা টুকরা হচ্ছে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে। বিশ্ব শঙ্কিত ছিল—চেক আর স্লোভাকদের মধ্যেও কি একই দশা হবে? কিন্তু চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়ার নেতারা দেখালেন এক অনন্য রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন, তাঁরা আলাদা হবেন, কিন্তু শত্রু হিসেবে নয়, বন্ধু হিসেবে।
ডিসেম্বরের এই শেষ দিনগুলোতে প্রাগ এবং ব্রাতিস্লাভায় চলছিল শেষ মুহূর্তের দাপ্তরিক প্রস্তুতি। কোনো বুলেট ছোড়া হয়নি, কোনো মায়ের কোল খালি হয়নি। আলোচনার টেবিলে বসে কলমের খোঁচায় দুটি জাতি তাদের সীমানা, সম্পদ ও সেনাবাহিনী ভাগ করে নেয়। ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে চেকোস্লোভাকিয়া বিলুপ্ত হয় এবং ১ জানুয়ারি মানচিত্রে জন্ম নেয় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র—চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া।
ডিসেম্বরের এ সময়টি চেক প্রজাতন্ত্রের মানুষের কাছে এক মিশ্র অনুভূতির দিন। এটি তাদের মনে করিয়ে দেয় যে জোর করে একত্রে থাকার চেয়ে সম্মানের সঙ্গে আলাদা হওয়া অনেক শ্রেয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ছিল ভিন্ন—সেখানে পাকিস্তানি শাসকেরা আমাদের গণতান্ত্রিক রায় মেনে নেয়নি বলেই যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। কিন্তু চেক প্রজাতন্ত্রের এই ইতিহাস আমাদের শেখায়, যদি পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকে, তবে সবচেয়ে কঠিন রাজনৈতিক সংকটও রক্তপাত ছাড়াই সমাধান করা সম্ভব। এটি মানবতার এক নীরব বিজয়।