
ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসেই অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বৈচিত্র্যময় সব প্রাণী দেখা যায়। সেই সব প্রাণী দেখতে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের প্রতিযোগীদের নিয়ে যাওয়া হয় ‘অস্ট্রেলিয়া জু’-তে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে দেওয়া নীল রঙের টি-শার্ট পরে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা খুদে গণিতবিদদের। আর এই সময়ে দলনেতারা ব্যস্ত খাতা কাটা নিয়ে। আগামী শনিবার গণিত অলিম্পিয়াডের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
আজ সকাল থেকেই একটা অন্য রকম উত্তেজনা কাজ করছিল সবার মধ্যে। গণিত অলিম্পিয়াডে গেল দুই দিনের পরীক্ষার সেই চাপ-উদ্বেগ আজ যেন উড়ে গেছে। এখন শুধু নির্মল আনন্দ আর নতুন কিছু দেখার উন্মাদনা। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় বাসে চেপে খুদে গণিতবিদেরা সানশাইন কোস্টের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এগিয়ে যায় চিড়িয়াখানার দিকে।
প্রায় ৭০০ একর জায়গাজুড়ে ‘অস্ট্রেলিয়া জু’ যেন অন্য জগৎ। চিড়িয়াখানার প্রবেশপথেই তার আভাস পাওয়া যায়। চারদিকে সবুজের সমারোহ, পাখির কিচিরমিচির যেন স্বাগত জানায় সবাইকে। চিড়িয়াখানায় ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ চোখ আটকে গেল এক বিশাল খাঁচার দিকে। খোলা আকাশের নিচে গ্লাসের ওয়ালের ওপারে দেখা গেল এক রাজকীয় বাঘকে। তার চালচলনে এক অদ্ভুত আভিজাত্য, যেন সে বনের রাজা। আমরা বেঙ্গল টাইগারের দেশের মানুষ, স্বভাবতই বাঘের প্রতি এক ভিন্ন টান অনুভব করি। তাই দূর থেকে বাঘ মামাকে দেখেই আমরা সবাই একটু আগ্রহ নিয়ে দেখি। একইভাবে অন্য সব দেশের মানুষেরা ভীষণ আগ্রহ নিয়ে বাঘের ছবি তুলছিল আর তার প্রতিটি নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করছিল।
বাঘ দেখার পর শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেল কোয়ালাসহ অন্যান্য প্রাণীর দিকে। কোয়ালা বেশ মনোযোগ টেনেছে শিক্ষার্থীদের। কোয়ালার অদ্ভুত ঘুমন্ত ভঙ্গি, নরম পশম আর অলস ভঙ্গিমা দেখে সবাই মুগ্ধ। কেউ কেউ কোয়ালার ছবি তুলছে, কেউ আবার তার ঘুমন্ত ভঙ্গি দেখে হাসছে। এরপর আমরা গেলাম ক্যাঙারু দেখতে। ক্যাঙারুরা লাফিয়ে লাফিয়ে যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছিল। একসময় ক্যাঙারুর সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ মেলে শিক্ষার্থীদের।
চিড়িয়াখানার ভেতরের পরিবেশ ছিল সত্যিই উৎসবমুখর। বিভিন্ন ধরনের প্রাণী দেখার পাশাপাশি খুদে গণিতবিদেরা নিজেদের মধ্যে গল্প আর আড্ডায় মেতে উঠেছিল। গণিত অলিম্পিয়াডের সময় যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ দেখেছি, তা পুরোপুরি উধাও হয়ে যায় এই সবুজ প্রকৃতিতে। এখানে সবাই বন্ধু, সবাই এক নতুন অভিজ্ঞতার অংশীদার।
আমরা হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখলাম। কুমিরের বিশাল আকার, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির রঙিন ডানা, আর সরীসৃপদের অদ্ভুত ঘোরাফেরা আমাদের মুগ্ধ করেছে।
অস্ট্রেলিয়া জু-তে আমাদের ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ক্রোকোসিয়ামে ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ারিয়র্স শো। দুপুরে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী সত্যিই অসাধারণ! বিশাল অ্যারেনায় প্রশিক্ষকেরা বিশাল আকৃতির কুমিরদের নিয়ে এসে নানা কসরত দেখান। সার্কাসের হাতির মতো নানা কৌশল দেখায় বিভিন্ন আকারের কুমির। তাদের অবিশ্বাস্য শক্তি আর গতি দেখে সবাই মুগ্ধ। কেবল কুমিরই নয়, মনোমুগ্ধকর নানা বর্ণের অচেনা সব পাখি আমাদের আনন্দ দেয়। একই সঙ্গে ছিল পাইথন থেকে অ্যানাকোন্ডাসহ নানা ধরনের সাপ। ছিল নানা দেশের নানা জাতের প্রাণী। ঘুরতে ঘুরতে প্রায় বিকেল, আমরা ফিরে আসি আমাদের রিসোর্টে। আগামীকাল শিক্ষার্থীরা যাবে অজি ওয়ার্ল্ড থিম পার্কে। আর পরের দিন ফলাফল ঘোষণা।
গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া প্রতিটি দলের দলনেতারা আজ ও আগামীকাল ব্যস্ত খাতা কাটা নিয়ে। পরশু ১৯ জুলাই সমাপনী আয়োজনে ঘোষণা করা হবে ফলাফল।
অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলে রয়েছে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সদ্য এসএসসি পাস শিক্ষার্থী মনামী জামান, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সদ্য এসএসসি পাস শিক্ষার্থী জাওয়াদ হামীম চৌধুরী ও ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী তাহসিন খান। চট্টগ্রাম বাকলিয়া সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জিতেন্দ্র বড়ুয়া, চট্টগ্রাম কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রায়হান সিদ্দিকী ও রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এম জামিউল হোসেন।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে ৬৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য ছয় সদস্যের বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচন করা হয়েছে। দল নির্বাচন ও এর আনুষঙ্গিক আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।