Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশি নারীদের উচ্চতা বাড়ছে: গবেষণা

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশি নারীদের গড় উচ্চতা বাড়ছে। গবেষকদের চোখে নারীদের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি ধরা পড়েছে। তাঁরা বলছেন, গড় উচ্চতা বাড়লেও দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন বা কৈশোরে সন্তান জন্ম দিয়েছেন, এমন নারীরা উচ্চতায় পিছিয়ে রয়েছেন।

সত্তরের দশকে দেশের নারীদের গড় উচ্চতা ছিল ১৫০ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার (৫৯ দশমিক ১৭ ইঞ্চি)। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে উচ্চতা বেড়ে হয় ১৫১ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার (৫৯ দশমিক ৬৯ ইঞ্চি বা প্রায় ৫ ফুট)। দুই সময়ের মধ্যে নারীদের উচ্চতার পার্থক্য হয় ১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার।

গবেষকেরা বলছেন, ১৯৭৪ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী নারীদের উচ্চতা বছরে গড়ে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ সেন্টিমিটার করে বেড়েছে। এর পরে জন্ম নেওয়া নারীরা এই গবেষণার আওতায় ছিলেন না।

‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের নারীদের গড় উচ্চতা বেড়েছে। তবে যেসব নারী তাঁদের বয়স ১৭ বছর হওয়ার আগে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, তাঁদের উচ্চতা বাকি জীবনে আর বাড়ে না বা কম বাড়ে। এসব নারীর উচ্চতা অন্যদের তুলনায় অর্থাৎ যাঁরা আরও বেশি বয়সে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, তাঁদের তুলনায় ১ সেন্টিমিটার কম থেকে যাচ্ছেন।’
মো. মঈনুদ্দিন হায়দার, আইসিডিডিআরবির গবেষক ও নিবন্ধের প্রধান লেখক

গবেষণাটি করেছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), বাংলাদেশ ব্যাংক, যুক্তরাজ্যের পপডেভ কনসালটেন্সি লিমিটেড এবং যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ডেটা ফর ইম্প্যাক্টের সাতজন গবেষক। এ বিষয়ে তাঁদের একটি নিবন্ধ যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব গ্লোবাল হেলথ নামের প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য সাময়িকী জার্নাল অব গ্লোবাল হেলথ-এ গত মাসে প্রকাশিত হয়েছে।

Also Read: শিশুর উচ্চতা ও বুদ্ধি বাড়াতে এই কাজগুলো করছেন তো

আইসিডিডিআরবির গবেষক ও নিবন্ধের প্রধান লেখক মো. মঈনুদ্দিন হায়দার গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের নারীদের গড় উচ্চতা বেড়েছে। তবে যেসব নারী তাঁদের বয়স ১৭ বছর হওয়ার আগে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, তাঁদের উচ্চতা বাকি জীবনে আর বাড়ে না বা কম বাড়ে। এসব নারীর উচ্চতা অন্যদের তুলনায় অর্থাৎ যাঁরা আরও বেশি বয়সে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, তাঁদের তুলনায় ১ সেন্টিমিটার কম থেকে যাচ্ছেন।’

দেশের নারীদের উচ্চতা বাড়ছে, এটি সুসংবাদ। এটা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করতে হবে। বাল্যবিবাহ বন্ধ করলে উচ্চতার ক্ষেত্রেও সুফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘গবেষণাটি থেকে আমরা বুঝতে পারি, পুষ্টির সঙ্গেও উচ্চতা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। সুতরাং কিশোরীদের পুষ্টি নিশ্চিত করার ব্যাপারেও আমাদের আরও যত্নবান হতে হবে।’
আবু জামিল ফয়সাল, জনস্বাস্থ্যবিদ

গবেষকেরা কীভাবে জানলেন

গবেষকেরা সারা দেশের ২৮ হাজার ২২১ জন নারীর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের তথ্য গবেষকেরা পেয়েছেন ২০০৪, ২০০৭, ২০১১, ২০১৪ এবং ২০১৭-১৮ সালের বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ থেকে।

জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ দেশের মানুষের স্বাস্থ্যবিষয়ক সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জরিপ। এই জরিপ থেকে গবেষকেরা নারীদের জন্মের ইতিহাস, উচ্চতা-ওজনসহ শারীরিক উপাত্ত এবং অন্যান্য জনমিতিক ও স্বাস্থ্যবিষয়ক উপাত্ত নিয়েছেন।

গবেষণা নিয়ে নিবন্ধে বলা হয়েছে, শরীর গঠনতন্ত্র বিজ্ঞান অনুযায়ী ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ৩০ বছরের পর তা সংকুচিত হয়। তাই জরিপের দিন যাঁদের বয়স ২০ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে ছিল, তাঁদের তথ্যই এই গবেষণায় নেওয়া হয়েছে। এসব নারী ছিলেন বিবাহিত।

একজন নারী কোন বছরে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তিনি কত বছর বয়সে প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, এই তথ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন গবেষকেরা। নারী সমাজের কোন সম্পদ শ্রেণির সদস্য (ধনী বা দরিদ্র), কোন অঞ্চলের মানুষ বা কোন ধর্মের অনুসারী, সেসব তথ্যও বিবেচনা করা হয়েছে।

বিশ্লেষণে কী দেখা গেল

নিবন্ধে গবেষকেরা বলেছেন, দুটো প্রধান প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য তাঁরা এই গবেষণা করেছেন। প্রথমত, সময়ের হাত ধরে বাংলাদেশের নারীদের উচ্চতা কি বেড়েছে? দ্বিতীয়ত, কৈশোরে ও প্রাপ্ত বয়সে সন্তান জন্ম দিলে কি উচ্চতা কমে বা বাড়ে? এর উত্তর তাঁরা পেয়েছেন।

উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৭৪ ও ১৯৮৫ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা নারীদের গড় উচ্চতা ছিল ১৫০ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার। আবার ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া নারীদের গড় উচ্চতা দেখা যায় ১৫১ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার। প্রতিবছরের বিশ্লেষণেও গড় উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি দেখা যায়। গবেষকেরা বলছেন, এটাই স্বাভাবিক বা প্রকৃতিগত।

দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছর উচ্চতা বাড়ছে গড়ে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ সেন্টিমিটার করে। এর অর্থ হচ্ছে ওই সময়ের মধ্যে যেকোনো বছরে জন্ম নেওয়া নারী তার ঠিক আগের বছর জন্ম নেওয়া নারীর চেয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ সেন্টিমিটার বেশি লম্বা।

গবেষণায় দেখা যায়, বয়স ১৭ বছর হওয়ার আগে সন্তান জন্ম দেওয়ার সঙ্গে নারীর উচ্চতা কম থাকার সম্পর্ক রয়েছে। নারীদের জন্মের বছর এবং প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করে গবেষকেরা এই কথা বলছেন। যেসব নারী ১৫ বছর বয়সে বা তার আগে সন্তান জন্ম দিয়েছেন, তাঁদের গড় উচ্চতা দেখা গেছে ১৫০ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার। যেসব নারী ১৭ বছর বয়সে সন্তান জন্ম দিয়েছেন, তাঁদের গড় উচ্চতা পাওয়া গেছে ১৫০ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার। অন্যদিকে যেসব নারী ১৮ বছর বয়সে বা তার পরে সন্তান জন্ম দিয়েছেন, তাঁদের গড় উচ্চতা ১৫১ দশমিক ২ সেন্টিমিটার।

সমাজের সবচেয়ে ধনী শ্রেণির নারীদের গড় উচ্চতা সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণির নারীদের চেয়ে বেশি। ধনী শ্রেণির নারীদের গড় উচ্চতা দেখা গেছে ১৫১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার। অন্যদিকে সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণির নারীদের গড় উচ্চতা ১৫০ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ সমাজের দুই শ্রেণির নারীদের গড় উচ্চতার পার্থক্য ১ দশমিক ২ সেন্টিমিটার।

ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে নারীদের গড় উচ্চতার পার্থক্য দেখা গেছে। দেশের পশ্চিম অঞ্চলের নারীরা দেশের মধ্য অঞ্চলের নারীদের চেয়ে বেশি লম্বা। আবার মুসলিম নারীদের গড় উচ্চতা অমুসলিম নারীদের চেয়ে বেশি। গবেষকেরা বলছেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় নারীর বয়স, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ভৌগোলিক অবস্থান নারীর উচ্চতায় যতটা প্রভাব ফেলে, ধর্ম ততটা ফেলে না।

গবেষকেরা বলছেন, নারীদের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি এটাই ইঙ্গিত করে যে নারীদের জীবনমান বাড়ছে। ধনী শ্রেণির নারীদের বেশি লম্বা হওয়ার অর্থ হলো আর্থসামাজিক অবস্থার সঙ্গে উচ্চতার সম্পর্ক আছে।

এমন পার্থক্য ভারতের এক গবেষণাতেও দেখা গেছে বলে গবেষকেরা তাঁদের নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা এটাও বলছেন, জিনগত বৈশিষ্ট্য, পরিবেশ, পুষ্টি, উপার্জন উচ্চতায় কী ভূমিকা রাখে, তার জন্য নতুন নতুন গবেষণা হওয়া দরকার।

‘এটা সুসংবাদ’

যাঁদের শারীরিক উচ্চতা বেশি, সাধারণত তাঁদের শারীরিক শক্তিও বেশি হয়। সবল শরীরে রোগব্যাধি কম হয়।

জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল চার দশক ধরে নারীস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দেশের নারীদের উচ্চতা বাড়ছে, এটি সুসংবাদ। এটা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করতে হবে। বাল্যবিবাহ বন্ধ করলে উচ্চতার ক্ষেত্রেও সুফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘গবেষণাটি থেকে আমরা বুঝতে পারি, পুষ্টির সঙ্গেও উচ্চতা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। সুতরাং কিশোরীদের পুষ্টি নিশ্চিত করার ব্যাপারেও আমাদের আরও যত্নবান হতে হবে।’