
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের স্থান দেখতে এখনো আসছেন উৎসুক জনতা। তবে তাঁদের সংখ্যা কমছে। এদিকে ঘটনার দিন স্কুলে ফেলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের স্কুলব্যাগ ও বই–খাতা আজ রোববার নিতে আসেন অভিভাবকেরা।
আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় উৎসুক জনতাকে। তাঁদের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানে গিয়ে ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে দেখা যায়। তাঁদের ক্যাম্পাসের একটি প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকতে দিয়ে অন্য পথ দিয়ে বের করে দেন প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তাকর্মীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, দিয়াবাড়ি মোড়ে অবস্থান করছেন ১৫ জনের মতো পুলিশ সদস্য। ক্যাম্পাসের ভেতরেও ১০-১২ জন পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে। এর বাইরে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিতের কাজ করছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তাকর্মীরা।
আজ বেলা ১১টার দিকে বিমানবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানে আসে। তারা ঘটনাস্থল এবং এর আশপাশে থাকা আরও কিছু ধ্বংসাবশেষ ও আলামত সংগ্রহ করে।
২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ওই ঘটনায় গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে এখনো ৩৬ জন চিকিৎসাধীন। তাঁদের কয়েকজনের অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয় বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সেদিন যে যেভাবে পেরেছেন, ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের ফেলে যাওয়া স্কুলব্যাগ ও বই–খাতা নিয়ে যেতে আজ সকাল থেকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে অভিভাবকদের জানানো হয়।
ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের পাশের একতলা ভবনের একটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ সারি করে রাখা হয়। ব্যাগের ওপর শিক্ষার্থীদের নাম-রোল, শ্রেণি ও শাখা লিখে একটি কাগজ সাঁটিয়ে দেওয়া রয়েছে।
কক্ষটিতে থাকা বেশ কয়েকটি ব্যাগের মধ্যে একটি কালো রঙের ব্যাগ আলাদা করে নজরে পড়ে। দেখে বোঝা যাচ্ছে, ব্যাগটি আগুনে পুড়েছে। আধা পোড়া ব্যাগটির ওপর এক টুকরা কাগজে লেখা রয়েছে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আফনান ফাইয়াজের নাম ও স্কুলের দেওয়া কোড।
বেলা তিনটার দিকে সন্তানদের স্কুলব্যাগ নিতে ক্যাম্পাসে আসেন পপি আক্তার। তাঁর ছেলে মাহাথির মোহাম্মদ স্কুলের ইংলিশ ভার্সনে সপ্তম শ্রেণিতে আর মেয়ে সামিহা জামান অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
পপি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে এবং মেয়ে তাদের “ডিটেনশন ক্লাসের (নিয়ম ভাঙলে শাস্তিমূলক বাড়তি ক্লাস)” জন্য ওই বিল্ডিংয়ে (যে ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হয়) গিয়েছিল। ক্লাস শুরু হতে দেরি হওয়ায় ছেলে মাঠে খেলতে গিয়েছিল। আর মেয়ে তার বান্ধবীদের জোরাজুরিতে বের হয়। তারা বলেছে, তারা অনেক জোরে শব্দ শুনতে পায়। এরপর তারা একে অপরকে খুঁজতে থাকে।’
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মানসিক ধাক্কা (ট্রমা) কাটিয়ে উঠতে কাউন্সেলিং সেবা চালু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। দুর্ঘটনার পরদিন থেকে এখন পর্যন্ত কাউন্সেলিং নিয়েছেন ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকেরা কাউন্সেলিং করালেও আগামীকাল সোমবার থেকে পেশাদার মনোবিদেরা যোগ দেবেন বলে একজন শিক্ষক জানান।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিমান বিধ্বস্ত হওয়া ভবনের পাশে কথা হয় ইংলিশ ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মিনহাজুল ইসলামের মা পারভীন আক্তারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে। সে ঘটনার সময় খুব কাছে ছিল, সে জন্য এখন সে ভয় পাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তার কাউন্সেলিং করিয়েছি। ডাক্তার তাকে টেলিভিশন এবং মোবাইল না দেখতে বলেছেন। পাশাপাশি তাকে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য ঘটনাস্থলে আনতে বলেছেন, সে জন্য নিয়ে এসেছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে একজন শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছি। যাঁরা এ ঘটনায় এখনো ভীত, তাঁদের সাহস জোগানোর চেষ্টা করছি। তাঁরা যেন ভয় কাটিয়ে উঠতে পারেন, আমরা সেই চেষ্টা করছি।’
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে দুই দফায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত ক্যাম্পাস ছুটি থাকবে। এরপর আর ছুটি বাড়বে কি না, আগামীকাল তা জানা যাবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল।