গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর মিরপুরের ১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর মিরপুরের ১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও আনসারের ৩১৩ স্থাপনায় হামলা

  • চার বাহিনীর প্রায় ৩০০টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।

  • ভাঙচুর হয়েছে সাঁজোয়া যানও, হামলা হয়েছে অনেক থানায়।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় সারা দেশে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসারের ৩১৩টি স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে তাদের সাঁজোয়া যানসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি।

সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তারা বলছে, ১৫ থেকে ২২ জুলাই—এই আট দিনে এসব ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে পুলিশের তিনজন ও আনসারের একজন সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন চারটি বাহিনীর ১ হাজার ৩৮১ সদস্য।

বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ ও সংঘাত ঘিরে চার বাহিনীর প্রায় ৩০০টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে পুলিশের সাঁজোয়া যান আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ারেও (এপিসি)। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কার্যালয়ের পাশাপাশি থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে।

১৫ থেকে ২২ জুলাই—এই আট দিনে চার বাহিনীর ১ হাজার ৩৮১ জন আহত হয়েছেন।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়াতে থাকে। ১৮ থেকে ২০ জুলাই—এই তিন দিনে সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলছে, এই তিন দিনে ‘উত্তেজিত জনতা’ কর্তৃক ৮৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর বেশির ভাগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি স্থাপনা।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক ইনামুল হক সাগর গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, যখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়, তখন সবার আগের পুলিশকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এবারও তা–ই হয়েছে। এ ক্ষেত্রে থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন কার্যালয় তাদের হামলার লক্ষ্য ছিল।

পুলিশের ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহত

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ-সংঘাত চলাকালে সারা দেশে পুলিশের ২৩৫ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। এসব স্থাপনার মধ্যে আছে থানা, বিভিন্ন ইউনিটের কার্যালয়, ফাঁড়ি, ক্যাম্প ও পুলিশ বক্স। ২৩৬টি যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে পিকআপ, আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), রেকার, জিপ, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। পুলিশের তিন সদস্য নিহত হন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৩১ জন। এর মধ্যে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছেন চারজন।

সারা দেশের মধ্যে রাজধানীতে সহিংসতায় ৬৯টি পুলিশ বক্সসহ ৮০টি স্থাপনা ও কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সংঘাতে ডিএমপির যে পরিমাণ স্থাপনা, যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ৬১ কোটি টাকা।

এ ছাড়া র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সংঘর্ষ চলাকালে পাঁচটি থানায় হামলার খবর পেয়েছে। এর মধ্যে আছে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা; গাজীপুরের গাছা থানা, টঙ্গী পশ্চিম থানা ও বাসন থানা এবং নরসিংদীর হাইওয়ে থানা।

আহত হন র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যও

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‍্যাবের কোনো স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটেনি বলে বাহিনী দুটির পক্ষ থেকে জানা গেছে। তবে সংঘর্ষে বিজিবির ৫২ সদস্য আহত হয়েছেন। র‌্যাবের আহত হয়েছেন শতাধিক। তা ছাড়া তাদের ১৩টি গাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানো হয়েছে।

এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, সহিংসতা সৃষ্টিতে বাধা মনে করায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছে।

আনসারের ৭৮ স্থাপনায় হামলা

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সহিংসতায় মতিঝিল থানায় সংযুক্ত একজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৮ জন। ৭৮টি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। এর মধ্যে কেপিআইভুক্ত (কি পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর) বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা বাহিনীটির ৭৪টি গার্ডে (ক্যাম্প) হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার রয়েছে ৩০টি।

বাহিনীটি জানিয়েছে, হামলা হয়েছে রাজধানীর মালিবাগে আবুল হোটেল এলাকার আনসারের যানবাহন রাখার ডিপোতে। হাতিরঝিলে আনসারের ট্রাফিক ব্যারাক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাহিনীটির শেরপুর ও রংপুরের জেলা কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে।

আনসারের সহকারী পরিচালক মো. রুবেল হোসাইন প্রথম আলোকে জানান, সংঘাত-সহিংসতায় তাঁদের তিনটি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে ২৩টি গাড়ি ও মোটরসাইকেল। পোড়ানো হয়েছে এবং লুট হয়েছে ২০টি মোটরসাইকেল।

১৯ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সরকার। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। এর পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। তবে এখনো কারফিউ জারি আছে।