
১২ ডিসেম্বর পুরানা পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ।
ঢাকা মেডিকেলের পর এভারকেয়ারে চিকিৎসা।
১৫ ডিসেম্বর নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে।
মারা যান ১৮ ডিসেম্বর।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আনা হয়েছে।
আজ শনিবার বেলা দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে শরিফ ওসমান হাদি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে গতকাল শুক্রবার বলা হয়েছে, হাদির মরদেহ বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিটে অবতরণ করে।
ওসমান হাদির কফিন শাহজালাল বিমানবন্দরে নামানো হলে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সে সময় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ এবং ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে জানানো হয়, জানাজায় যাঁরা অংশ নিতে আসবেন, তাঁদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার অনুরোধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চ গতকাল ফেসবুক পোস্টে জানায়, পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হাদিকে কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে
সমাহিত করা হবে। এ জন্য মিছিল সহকারে তাঁর মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নেওয়া হবে।
এদিকে হাদি হত্যার বিচার ও ভারতীয় আধিপত্যের অবসানের দাবিতে গতকাল রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ করে ইনকিলাব মঞ্চ, ডাকসুসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। বক্তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন। এ ছাড়া শাহবাগ মোড়কে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ হিসেবে ঘোষণা করেন ডাকসুর ভিপি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে
শরিফ ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে
দুর্বৃত্তরা। প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আজ রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে বলেও ভাষণে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
ঝালকাঠির নলছিটি থেকে উঠে আসা শরিফ ওসমান হাদিকে শুরুতে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী বক্তব্যের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি আলোচিত ছিলেন। মাদ্রাসার শিক্ষক বাবার সন্তান হাদি নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে তিনি বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করে আলোচনায় আসেন হাদি। ইনকিলাব মঞ্চ প্রতিষ্ঠার পর জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণ, শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণার দাবিতে শাহবাগে ধারাবাহিক সমাবেশের আয়োজন করেন তিনি। বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতেও নিয়মিত আমন্ত্রণ পেতে থাকেন। প্রথমে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হলেও পরে আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন। দ্রুত তাঁর একটি সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে ওঠে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন হাদি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিতেও ছিলেন সরব। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙার ঘটনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর হাদি জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যোগ দিলেও পরে নতুন দল এনসিপিতে যোগ দেননি; বরং ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে কয়েক মাস ধরে মাঠে সক্রিয় ছিলেন।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার এক মাস আগেই হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন ওসমান হাদি। গত নভেম্বরে নিজের ফেসবুক
পেজে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেছিলেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি নম্বর থেকে তাঁকে ফোন ও মেসেজ পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি লেখেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ সমর্থকেরা তাঁকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছে। তবে জীবননাশের আশঙ্কা সত্ত্বেও ‘ইনসাফের লড়াই’ থেকে পিছিয়ে যাবেন না।