বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারকে এক বছর ধরে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। এবার অপসারিত হলেন তিনি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি বিচারিক দায়িত্ব পালনের অযোগ্য হয়ে পড়েছেন।
দেড় দশক আগে নিয়োগ পাওয়া হাইকোর্ট বিভাগের এই বিচারককে অপসারণ করেছেন রাষ্ট্রপতি। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে আজ বুধবার সেই প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সচিব লিয়াকত আলী মোল্লার সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্তে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার তাঁর পদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন বলে রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের পুনর্বহাল হওয়া অনুচ্ছেদ ৯৬-এর দফা (৬) বিধান অনুযায়ী ৫ নভেম্বর (আজ বুধবার) তাঁকে (বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার) ওই পদ হতে অপসারণ করেছেন।
কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে কাউন্সিল গঠিত হয়। এই কাউন্সিলে থাকেন প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতি।
খুরশীদ আলম সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর স্থায়ী হয়েছিল তাঁর নিয়োগ।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পর ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ ও ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের পদত্যাগ ও অপসারণের দাবিতে গত বছরের ১৬ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশের প্রেক্ষাপটে খুরশীদ আলমসহ ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়। তাঁদের মধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর রাষ্ট্রপতি এ পর্যন্ত তিনজন বিচারপতিকে অপসারণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে বিচারপতি খিজির হায়াতকে গত ১৮ মার্চ এবং বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে গত ২১ মে অপসারণ করা হয়।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন অবস্থায় দুজন বিচারপতি পদত্যাগ করেন। তাঁরা হলেন বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের গত সেপ্টেম্বরে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওই ১২ জনের মধ্যে দুজন বিচারপতি অবসর নিয়েছেন। বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এবং বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস গত বছরের ৩০ জানুয়ারি তাঁদের চাকরিকালীন মেয়াদ পূর্ণ করে অবসরে যান।
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে নিতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এনেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন। আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে গত বছরের ২০ অক্টোবর রায় দেন আপিল বিভাগ।
এরপর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন গত ২১ আগস্ট এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হলে বিচারপতি অপসারণ–সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত হয়।